“মনোজিজ্ঞাসায়-প্রফেসর তাজুল স্যার”
“নিজেকে খুব একা বোধ করি, নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হয়”
সমস্যাঃ আমার বয়সঃ২০। আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরি পাশাপাশি প্রান-আরএফএল গ্রুপে জব করি
। আমি আসলে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা বোধ করি,নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হয়।
কেউ যদি কখনো আমার সাথে খারাপ বা কটু কথা বলে তবে সেগুলা আমাকে খুব যন্ত্রনা দেয়।
বিশেষ করে রাতে এগুলো আমাকে কষ্ট দেয়
।যখন পরিবারের সাথে একটু ভালো আর সুখি সময় পারকরি ঠিক তখনিই আমার একটা খারাপ লাগা জেগে ঊঠে।
সুখের সময়গুলাতে কষ্টের আর ডিপ্রেশন এর অনুভুতি হুট করেই জেগে উঠে।
আমি আপনাকে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি””আমি মিডেলক্লাশ ফ্যামিলির একজন, মাঝে মাঝে যখন আমার ঘরে ভালো খাবারের আয়োজন করে তখন আমার ভাবনায় আসে আমিতো ভালো লেখাপড়া করিনা,ভালো রেজাল্ট করিনা, তাহলে এতো ভাল খাবার খেয়ে কি লাভ”
এই ধরনের সমস্যাগুলাই আমার জন্য খুব বিরক্তিকর।
আমি সবার সাথে দ্রুত মিশতে পারিনা।
আর যে বা যারা আমাকে অবহেলা করে তাদের অবহেলা গুলো আমাকে অত্যান্ত ভাবায়
,সারাদিন শুধু ওইবিষয় গুলাই মাথায় থাকে আর কষ্ট লাগে।
এই সমস্যা গুলো থেকে কিভাবে সমাধান পেতে পারি তার জন্য সাজেশন আশা করি।
তাজুল স্যারের কাছ থেকে।
পরামর্শ
তোমার সমস্যাটি অনেকেরই মনের কথা।খারাপ বা কটু কথা শুনলে মনে কষ্ট পাওয়া,চোট পাওয়া অনেকেরই হয়ে থাকে
এসব হয় মনে গভীর হীনমন্যতাবোধ থাকলে,
সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার ( সোশাল এপ্রোভাল) চাহিদা বেশী থাকলে
এবং আবেগীয়ভাবে অতি সংবেদনশীল হওয়ার কারনে।
আর রাতে এসব কুভাবনা বেশী হয়,
কেননা তখন আমার বাইরের যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকি,নিজের সঙ্গে একা সম্মুখীন হই।
তাই হীনমন্যতা কাটাতে হবে
ও সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার অতিরিক্ত চাহিদা কমিয়ে আনতে হবে।
আমাদের ” মন ও মানুষ ” ধারাবাহিক ভিডিও সিরিজের প্রথম পরীক্ষামূলক ভিডিওতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
তুমি ও অন্য যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছো তারা ঐ ভিডিওটি দেখতে পারো।
একই সঙ্গে আমার ” মন ও মানুষ ” বইটি পড়তে পারো।
তোমার ২য় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে যখন একটু ভালো সময় আসে তখন আনন্দ করার বদলে মনে ” হুট করে” কষ্ট, ডিপ্রেশন জেগে উঠে।
এগুলো হচ্ছে তোমার অতি কঠোর আত্ম- সমালোচনা ( সেল্ফ ক্রিটিক্যাল) প্রবন স্বভাবের জন্য।
আমরা মনে করি আমরা নিজকে অনেক ভালোবাসি।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজদের খুব কমই ভালোবাসি।
বরং নিজকে কঠোর সমালোচনা করি,
নিজকে আসামির কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রাখি,
নিজকে করুনা করি,
এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নিজকে ঘৃনা ও অপছন্দ করি।
যাকে আমরা ভালোবাসি (নিজ সন্তান)
আমরা তার শত দোষ,ক্রটি থাকা সত্বেও
তার ভালো দিকগুলো বড় করে দেখি,
মন্দ কিছু থাকলেও সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে
তার ভালোত্বের প্রশংসা করি।
নিজকে ভালোবাসলেও তেমটি হওয়ার কথা।
নিজের অনেক দুর্বলতা,ক্রটি ও মন্দ দিক থাকলেও
সেগুলো বড় করে না দেখে
নিজের ভালো ও উজ্জ্বল দিকগুলোকে বড় করে দেখার কথা।
নিজের আনন্দ,সুখ,গৌরব,সাফল্য গাথা বেশি মনে পড়ার কথা।
কিন্তু যারা অতিরিক্ত আত্ম সমালোচনাপূর্ন (সেল্ফ ক্রিটিক্যাল),তারা নিজকে কম ভালোবাসে,
কম শ্রদ্ধা করে(সেল্ফ রেসপেক্ট)।
একারনে তাদের মন- ব্রেইনে সব সময়,
এমনকি আনন্দ ও সফলতার সময়েও
” হুট করে” উকি দেয় ব্যর্থতার কথা,বেদনার কথা,কষ্টের কথা।
তুমি নিজকে ভালোবাসতে শেখো,
নিজে যা ও যেমন তেমনটিকে পূর্নভাবে ” মেনে নিতে “(সেল্ফ একসেপ্ট) শেখো, নিজের ব্যর্থতা, মন্দ দিকগুলোকে বড় করে না দেখে নিজের সফলতা,আনন্দ, সুখ ও গৌরবকে বড় করে দেখতে শেখো।
দেখবে তোমার মন- মনন
ইতিবাচক, সুখদায়ক ও আনন্দদায়ক ভাবনা, চিন্তায় ভরপুর হয়ে উঠছে।
আমাদের শ্লোগানটি মনে রাখবে- be positive be happy
প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
e- mail: drtazul84@gmail.com