স্মার্ট রোগীরা চিকিৎসকের নিকট কি করে বেষ্ট সার্ভিস পেতে পারে জেনে নিন

রোগীরা

স্মার্ট রোগীরা চিকিৎসকের নিকট কি করে বেষ্ট সার্ভিস পেতে পারে জেনে নিন

 

ক) আপনার প্র‌য়োজন নি‌র্দিষ্ট কোন চি‌কিৎসক না‌কি স‌ন্তোষজনক চি‌কিৎসা~ আ‌গে ফিক্স ক‌রে নিন। ‌ছোটখাট জ্বর,কা‌শি, মাথা ব্যথা, ক‌য়েক ‌দি‌নের রো‌গের জন্য এম‌বি‌বি‌এস চি‌কিৎসক‌দের দেখান। তারাই য‌থেষ্ট। অধ্যাপক স্যার‌দের বা‌র্ডেন কর‌বেননা। প্র‌য়োজ‌নে তারাই আপনা‌কে স‌ঠিক চি‌কিৎস‌কের ‌নিকট রেফার কর‌বে। ন‌চেৎ এমনও হ‌তে পা‌রে আপ‌নি বিনা বা স্বল্প কার‌ণে অযথা বে‌শি কষ্ট কর‌ছেন।

খ) পছ‌ন্দের বি‌শেষজ্ঞ সম্প‌র্কে আ‌গেই খোঁজ নি‌য়ে যা‌বেন। এটাই স্মার্ট‌নেস। উ‌নি খুব ব্যস্ত কিনা ‌সেটাও ‌জে‌নে যা‌বেন, কারণ ‌সি‌নিয়ররা ব্যস্ত থাক‌বেন, এটাই স্বাভা‌বিক। স্বল্প সম‌য়ে স‌ঠিক চি‌কিৎসার বিষয়‌টি মে‌নে নি‌য়ে তার চি‌কিৎসায় আস্থা রাখুন। পরে সময় পেলামনা ব‌লে মন খারাপ কর‌বেননা, আপনার দরকার সুস্থতা।

গ) ‌সি‌রিয়াল এগুবার জন্য হাউকাউ কর‌বেন না। ম‌নে রাখ‌বেন বিনয়ী ব্য‌ক্তি সর্বত্র আদরনীয়। রোগী বে‌শি ক‌ষ্টে থাক‌লে চমৎকার ক‌রে এ‌টে‌ন্ডেন্ট‌কে বলুন বা সোজা চি‌কিৎসক বরাবর এক‌টি স্লিপ পা‌ঠি‌য়ে দিন “প্রিয় স্যার, আমার রোগী‌টি অবস্থা মুমূর্ষ, আপনার সহৃদয় সহ‌যো‌গিতা কামনা কর‌ছি” টাইপ কিছু লিখুন। চি‌কিৎসক‌দের ৯৯% ই নরম ‌দি‌লের। অনু‌রোধ গ্রহণ না কর‌লে বুঝ‌বেন তি‌নি বা‌কি ১% এর অন্তর্গত,অতএব ধৈর্য্য ধরুন।

ঘ) আ‌গে থে‌কে সুন্দর ক‌রে নি‌জের কথাগু‌লো গু‌ছি‌য়ে দু‌মি‌নিটে বলার প্র্যাক‌টিস করুন। এতে থাক‌বে আপনার কি কি কষ্ট, সব‌চে‌য়ে বে‌শি কোন‌টি, কত‌দিন ধ‌রে? আ‌গের চি‌কিৎসার ফল, কোন ঔষ‌ধে সমস্যা হ‌চ্ছে কিনা? সব এক লাইন ক‌রে। আপনার আ‌গের কোন পুরাতন রোগ আ‌ছে কিনা, যেমন ডায়া‌বে‌টিস, প্রেসার, যক্ষা,হাপা‌নি ইত্যা‌দি। জাস্ট নাম।

ঙ) প্র‌য়োজনীয় কথা বলুন। ‌কোন পুরাতন কাসু‌ন্দি বা কোন ‌কোন ডা: দে‌খি‌য়ে‌ছেন, কোন দেশ সফর ক‌রে‌ছেন, সেখা‌নের হাসপাতাল চকচ‌কে ছিল কিনা, এসব টেনে আন‌বেননা। স্মার্ট‌লোক যেমন সবার পছন্দ, স্মার্ট রোগীদে‌র ডাক্তাররা পছন্দ ক‌রেন।

চ) বিচ্ছু বাচ্চা, অ‌তি পাঙ্কু, পান ‌বি‌ড়ি খাওয়া ভকভ‌কে গন্ধ বা অ‌তি বকবক করা মানুষ‌দের সঙ্গী কর‌লে পৃ‌থিবীর যে‌কোন সেবা সা‌র্ভি‌সের মান প‌ড়ে যায়। সতর্ক থাকুন।

ছ) ম‌হিলা রোগী অবশ্যই হাজ‌বেন্ড বা ম‌হিলা সঙ্গী নি‌য়ে যা‌বেন। তানাহ‌লে চি‌কিৎসক আপনা‌কে দেখ‌তে বাধ্য নন। এটা মে‌ডি‌কেল এ‌থিক্স এর পার্ট। বাচ্চা হ‌লে মা যাওয়াটাই বেস্ট।

জ) চি‌কিৎস‌কের নিকট চি‌কিৎসক‌দের বদনাম কর‌বেননা। আপনার চাচা শ্বশু‌রের নানার খালা‌তো ভাই যে একজন ডাক্তা‌রের হাজ‌বেন্ড,‌ এসব তথ্য চি‌কিৎস‌কের চরম অপছন্দ। গিয়েই কাউ‌কে ফো‌নে লা‌গি‌য়ে, নিন কথা বলুন~ এক‌টি চরম অভদ্রতা। আ‌গে জানুন, কথা বল‌তে তার ‌কোন আপ‌ত্তি আ‌ছে কিনা?

ঝ) পা‌তি সাংবা‌দিক বা রাজনী‌তিবীদ হ‌লে প‌রিচয় গোপন করুন। তবে ভিআই‌পি রাজনী‌তিবীদ, প্রশাসন বা পু‌লি‌শের হাই অ‌ফি‌সিয়াল থাক‌লে রেফা‌রেন্স দিতে পা‌রেন। চি‌কিৎসকরা নি‌জে‌দের জু‌নিয়র ও জ্ঞা‌তিভাই‌দের উপর ভয়ানক সবল ও ক্ষমতাবান হ‌লেও এসব রেফা‌রেন্স‌কে য‌থেষ্ট সমীহ ক‌রেন। স্মার্টলি ‌ডিল কর‌লে, কাজ হ‌তে পা‌রে।

ঞ) যতবার যা‌বেন, দেখুক আর নাই দেখুক, সকল পুরাতন কাগজপত্রগু‌লো নি‌য়ে যা‌বেন। ফ‌লোআ‌পের টাই‌মেও সা‌থে নে‌বেন,য‌দি নি‌ষেধ না থা‌কে। এক্স‌রে/এমআরআই/‌সি‌টিস্ক্যা‌নের শুধু রি‌পোর্ট নয়, বরং ফিল্মও নি‌য়ে যা‌বেন। স্মার্ট রোগীরা সব‌চে নতুন প্রেস‌ক্রিপশন ও পরীক্ষার কাগজ উপ‌রে রে‌খে ডেট অনুসা‌রে সা‌জি‌য়ে ফাইল ক‌রে আ‌নে, সা‌র্ভিসও ভা‌লো পান।

ট) আপনার কি হ‌য়ে‌ছে, সম্ভাব্য কারণ, প‌রিণ‌তি কি, সার‌তে কেমন সময় লাগ‌তে পা‌রে, ব্যয় কেমন হ‌তে পা‌রে, এসব জানতে চাওয়া আপনার অ‌ধিকার। ত‌বে সব মিলি‌য়ে দুতিন মি‌নিট সময় নিন। অ‌ধিক সময় নেয়াটা পেছ‌নের মুমূর্ষ রোগীদের জন্য ক‌ষ্টের কারণ হ‌তে পা‌রে।

ঠ) ‌যেভা‌বে প্রেস‌ক্রিপশন করা, সে নিয়‌মে ঔষধ সেবন করুন। নিয়ম নিষেধগু‌লো স্ট্রিক‌লি ফ‌লো করুন। এ‌তে মহাকল্যাণ থা‌কে। কারণ চি‌কিৎসক যা জা‌নেন, সব আপ‌নি জা‌নেননা। ফা‌র্মেসি‌স্টের কথা শু‌নে কিছু বদলা‌বেন না। যে‌কোন স‌ন্দেহ বা ঔষধ সংক্রান্ত সমস্যায় চি‌কিৎসক‌কেই নক করুন।

ড) ‌যে‌কোন সমস্যা অকপ‌টে বলুন। ভুল হ‌লেও সেটা স্বীকার ক‌রে বিনীতভা‌বে বলুন। তথ্য গোপন কর‌া আপনার জন্য বিপদ ডে‌কে আন‌তে পা‌রে।

ঢ) ‌প্রেস‌ক্রিশন হারা‌নো চি‌কিৎস‌কের দরবা‌রের ক‌বিরা গুনাহ আর উহা‌কে মু‌ড়ির প্যা‌কে‌টের মত কোকড়া‌নো সগীরা গুনাহ। প্র‌য়োজ‌নে ফ‌টোক‌পি বা মোবাই‌লে ছ‌বি তু‌লে মূলটা নিরাপ‌দে রাখুন।

ণ) যত সেবা সা‌র্ভিস, কোনটাই বিনামূ‌ল্যে নয়। ভি‌জিট দেবার মান‌সিকতা নি‌য়েই চেম্বা‌রে যা‌ন। এটা চি‌কিৎস‌কের অ‌ধিকার। তার অ‌ধিকার না দি‌য়ে নি‌জের সুস্থতার চিন্তা করাটা শিশুসুলভ।

ত) দয়া ক‌রে ভি‌জিট নি‌য়ে বা‌র্গে‌নিং কর‌বেননা। আপ‌নি ভি‌জিট দি‌তে সমস্যা ফিল কর‌লে সরাস‌রি চি‌কিৎসক‌কে বলুন। ‌শতকতরা ৯৫ জন চি‌কিৎসক‌ই অত্যন্ত সু‌বি‌বেচক। ত‌বে কা‌রো আপ‌ত্তি থাক‌লে সম্মান করুন, কারণ এ‌টি তার অ‌ধিকার। তিনিই ঠিক কর‌বেন, কা‌র জন্য তার অ‌ধিকার ছাড়‌বেন, কা‌কে ছাড়‌বেন না?ভি‌জিট দেয়া‌কে নি‌জের জন্য সম্মানহা‌নিকর ভাব‌বেননা। ম‌নে রাখ‌বেন আপনার খরচ হওয়া সামান্য টাকার তুলনায় আপনার সুস্থতার মূল্য কো‌টি গুন বে‌শি দামী।

থ) কাউ‌কে দুর্ব্যবহারকারী; রগচটা, কটুভাষী, অসৎ ম‌নে হ‌লে ‌চি‌কিৎসক হিসা‌বে নয়, বরং মানুষ হিসা‌বে এ‌ড়ি‌য়ে চলাই কর্তব্য। মানু‌ষের মা‌ঝে স্বর্গ নরক, মানু‌ষে‌তে সুরাসুর। সুতরাং নি‌জে নিরাপ‌দে থাকুন, অপরজন‌কেও তার নিকট থে‌কে নিরাপদ থাক‌তে বলুন।

দ) একজন ‌চি‌কিৎসক‌কে দেখাবার পর কোন কারণ ছাড়াই আ‌রেকজন‌কে সে‌টি স্ক্রী‌নিং করা‌নো চরম বোকামী। পৃ‌থিবীর সব ব্য‌ক্তি তার নিজস্ব মতামত দে‌বেন। য‌দি আস্থাই না থা‌কে, ত‌বে দেখা‌লেন কেন? আর আস্থা থাক‌লে সেটা‌কে দুর্বল কর‌বেন কেন?

ধ) চি‌কিৎসা নেয়া সমাপ্ত হ‌লে এক‌টি চমৎকার সমাপনী বাক্য বা এক‌টি হা‌সি দিন। থ্যাঙ্কস মে‌সেজ দিন। হ‌তে পা‌রে; আপ‌নি ছি‌লেন ঐ দি‌নের ম‌নে দাগ কে‌টে যাওয়া সেরা রোগী। আপনা‌দের ছোট ছোট এ‌প্রিস‌য়েশন তা‌কে আরও চমৎকার ক‌রে তুল‌বে।

ন) শুধু ব্যবস্থাপত্র বা চি‌কিৎসা নেয়ার আশা কর‌বেননা। ‌চি‌কিৎস‌কের দোয়াও নিন। ম‌নে রাখ‌বেন, আপনার সুস্থতার বিষয়‌টি অবশ্যই তার ‌দোয়ার সা‌থেও সম্প‌র্কিত।

প) কোন চি‌কিৎসকই জে‌নেশু‌নে ভুল বা অপ‌চি‌কিৎসা দেননা। এমন‌কি জা‌নের শত্রু; রোগী হ‌য়ে এলেও উ‌ল্টো চি‌কিৎসা দেননা। সুস্থতার বিষয়‌টির মা‌লিকও তি‌নি নন। তিনি কোন যাদুকর বা ভগবান নন। উ‌নি তার অ‌র্জিত জ্ঞান ও অ‌ভিজ্ঞতা দি‌য়ে রোগ নির্ণ‌য় ও‌ তদনুসা‌রে ব্যবস্থাপত্র প্রদান ক‌রেন। অতএব আস্থা রাখুন, ধৈর্য্য রাখুন। ঘন ঘন ডাক্তার বদলা‌বেন না।

ফ) চি‌কিৎসা ‌নেবার পূ‌র্বে না‌মের শে‌ষে অবশ্যই এম‌বি‌‌বিএস বা বি‌ডিএস (ডেন্টাল) দে‌খে চি‌কিৎসা ‌নিন। ভা‌লো থাকুন, এ কামনা।

ডা মু‌হিব্বুর রহমান রা‌ফে
এম‌বি‌বিএস, বি‌সিএস (স্বাস্থ্য)
এম‌ডি (ফি‌জিক্যাল মে‌ডি‌সিন এন্ড রিহ্যা‌বি‌লি‌টেশন)
‌ফি‌জিয়্যা‌ট্রিস্ট

Related posts

One Thought to “স্মার্ট রোগীরা চিকিৎসকের নিকট কি করে বেষ্ট সার্ভিস পেতে পারে জেনে নিন”

  1. This website was… how do I say it? Relevant!! Finally I’ve found something that helped me.
    Many thanks!

Leave a Comment