হাজার পেশেন্ট ভাল হবার চেয়ে একজন পেশেন্ট খারাপ হওয়া অনেক বেশি কষ্টের

ডা. মৃণাল সাহা

হাজার পেশেন্ট ভাল হবার চেয়ে একজন পেশেন্ট খারাপ হওয়া অনেক বেশি কষ্টের

 

একশ কিম্বা হাজার পেশেন্ট ভালো করে যে তৃপ্তি পাওয়া যায় একটা পেশেন্টের আনওয়ান্টেড খারাপ হওয়া তার চেয়ে অনেক বেশীই কষ্ট দেয়। পেশেন্ট এর খারাপ হবার সাথে সাথে ডাক্তার এর উপর যে মেন্টাল স্ট্রেস পড়ে সেটা ভুক্তিভোগী ডাক্তারই একমাত্র বুঝতে পারেন। এই কষ্টের তুলনা নেই।

আজকাল ট্রেন্ড হচ্ছে, ডাক্তারের বদনাম করা, ডাক্তারকে মারধর করা কিম্বা অভিভাবক কর্তৃক অভিযুক্ত হয়ে অপদস্ত হওয়া কিম্বা পত্রিকায় নেগেটিভ খবর হওয়া। অথচ এর চেয়ে অনেক বেশী কস্টের হচ্ছে ডাক্তারের নিজের ভেতরের অন্তর্দহন। কাউকে বলে বোঝানো যায় না সেই কষ্টের তীব্রতা।

আমার প্রতিটি পেশেন্টের মৃত্যু হয়তো আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে, যা অন্য রোগীর জন্য উপকারী হয়েছে। কিন্তু প্রতিটা মৃত্যু আমার বুকের ভেতরে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে সে ক্ষত আমাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এটা চিরস্থায়ী! এটাই ডাক্তারের জীবন।

এত স্ট্রেসফুল পেশা আর কোনটা আছে কিনা আমার জানা নেই। কোন রোগী খারাপ হলে যে পরিমান হতাশায় ডুবতে হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। ডাক্তারের দোষ ছিলো কি ছিলো না সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে একজন রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে যখন সে খুব কাছের একজন হয়ে যায় তখন তার জন্য কিছু করতে না পারার হতাশা। এটা আসলেই পীড়াদায়ক।

খুব কম ফ্যাসিলিটি নিয়ে আমাদের ডাক্তারদের পথ চলা। কোন কিছুই আমাদের পক্ষে থাকেনা। কিছু রোগী বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, হয়তো একারনেই আমরা এখনো টিকে আছি। একটা পেশেন্ট খারাপ হলে সেই ভালোবাসার অধিকারটাই কষ্টের কারন হয়। প্রিয় মানুষের বিদায়ের মতোই একটা হাহাকার বুকের ভেতর আর্তনাদ করে ওঠে। কাউকে দেখানো যায় না সে কষ্ট। কেউ শুনলে অবাক হয়ে বলবে, ডাক্তার এর আবার কষ্ট কিসের?

এভাবেই চলতে হয়। এখানে ভুলের সুযোগ নেই। সুযোগ নেই ভালোবাসার, অথবা কষ্ট পাবার। ডেথ ডিক্লায়ার করে হাত ধুয়ে এসেই হয়তো বার্থ সার্টিফিকেট রেডি করতে হয় নতুন কোন নবজাতকের। এখানে কষ্ট পাবার সুযোগ কোথায়? এত স্ট্রেস তবুও, হাসি মুখে রোগীর সাথে কথা বলতে হয়। এটাই জীবন।

 

তবুও ভালো থাকি

 

ডা. মৃণাল সাহা

Related posts

One Thought to “হাজার পেশেন্ট ভাল হবার চেয়ে একজন পেশেন্ট খারাপ হওয়া অনেক বেশি কষ্টের”

Leave a Comment