অফিসের দুজন মেইল কলিগকে বিশেষ পছন্দ আমার।ক্রাশ খাই খাই অবস্থা আর কি। অল্পের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছি বলতে গেলে। দুজনের উপরে একসাথে ক্রাশ খাওয়াটা কেমন যেন ছোঁচা ছোঁচা হয়ে যেত।আবার একজনকে রেখে আরেকজনের উপরে ক্রাশ খেতে ইচ্ছে করল না।
ধরা যাক ওদের দেশ ইউরোপের কোথাও।
(আসল পরিচয় বলা যাচ্ছে না) বাংলাদেশে জব করছেন চার বছর ধরে।
কলিগ হিসেবে তাদের সাথে আমাকে সরাসরি কোন কাজ করতে হয় না।ওনার আমাদের এখানে টিচিং ফ্যাকাল্টি আর আমি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি। কেবল মাত্র ওরা অসুস্থ হলেই ওদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়।তবে আমরা সবাই ক্যাম্পাসে রেসিডেন্ট বলে প্রতিবেশীও বটে কোয়ার্টার কমপ্লেক্সে।তো সেজন্য অফিসের বাইরে আমাদের অফিসের সবার মধ্যে ছোট ছোট মিষ্টি মিষ্টি পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।ছোট বড় কোন উপলক্ষ্য পেলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে পার্টি সার্টি করতে।
এদিকে আমি একজন বিশিষ্ট অসামাজিক মানুষ হলেও জব ডেসক্রিপশন অনুযায়ী আমাকে ক্যাম্পাসের সবার সাথে হাই ,হ্যালো, গুড মর্নিং, গুড ইভনিং, আবহাওয়া এবং স্বাস্থ্য যে কত বড় সম্পদ তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করার চেষ্টা করতে হয় হাসি হাসি মুখে।
এখন বলি কেন ঐ দুজনকে বিরাট ভালো পাই আমি।শুধু আমিই না অন্য ফিমেল কলিগরাও এদের দুজনকে ভালো পায়।না তারা দেখতে দুর্দান্ত হ্যান্ডসাম এরকম কিছু না। তবে ওরা অসম্ভব জেন্টেল।আমি সহ বাকিরা ওদের কে এত পছন্দ করি কারন— ওরা দুজন বাংলাদেশে বসবাস করছেন নিজেদের বাচ্চাকে সাথে নিয়ে, বাচ্চাদের মায়েরা আসেনি এখানে । কোন পুরুষ মানুষ একা একা তিন এবং এগারো বছরের বাচ্চা লালন পালন করছে, পাশাপাশি চরম ক্যারিয়ারিস্টিক হয় জীবন কাটাচ্ছে আমি প্রথমবার এত কাছ থেকে এমন টা দেখলাম।এর আগে কোন দিন শুনিও নাই পুরুষ মানুষ বাচ্চাকে একা লালন পালন করতে পারে ! এরা দুজন এত চমত্কার করে বাচ্চাদের দেখাশোনা করে যে ওদের কে ভালোবাসতে ইচ্ছে অটোমেটিক করবে আপনার।রান্না থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ কিন্তু ওরা করে।
তিন বছরের মেয়ে বাবুর বাবাটা যখন রোজ সকালে নিজের একহাতে ল্যাপটপ ব্যাগ এবং অন্য হাতে মেয়ের হাত ধরে এবং কাঁধে মেয়ের স্কুল ব্যাগ নিয়ে কোয়ার্টারের সিঁড়ি ভেঙে নামে প্রায় দিনই আমার সাথে চোখাচোখি হয়।আর প্রতিবারই মুগ্ধ হই আমি।সকাল সাড়ে সাতটায় একজন ছেলে মানুষ অফিসের ড্রেস কোড মেনে ফিটফাট হয়ে মেয়েকে স্কুলের ড্রেস পড়িয়ে চুলে পনিটেল বেঁধে বাসা থেকে বের হচ্ছে এই দৃশ্যটা দেখে রোজ রোজ মুগ্ধ হতে ভীষন ভালো লাগে আমার।
আরেকজন আবার ভেজিটেরিয়ান।জাস্ট আমার উল্টো দিকের কোয়ার্টারে থাকে।নিত্য নতুন আইটেম নিজ হাতে পুত্রের জন্য রাঁধা হচ্ছে এই ভদ্রলোকের প্যাশন। পিতা পুত্র একসাথে গানের চর্চা করে প্রায় রাতে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ওদের ডুয়েট শুনতে শুনতে মনটা ভিজে যায়।
কে বলে পুরুষরা প্যারেন্টিং বুঝে না ? কে বলে প্যারেন্টিং শুধু মায়ের কাজ ।বাবা শুধু অর্থনৈতিক ভাবে সচল থাকলেই হলো ! ভুল।এসব গত বাঁধা মুখস্থ বুলিগুলো শুধু বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য মনে হয়।
যে নারী রাধে সে নারী চুলও বাধে
ঠিক তেমনি
যে পুরুষ ক্যারিয়ারিস্টিক হয় সে প্যারেন্টিংও এক্সপার্ট হয়।
.
লিখেছেনঃ
#মিম্ মি
মডেল
এনাম উর রহমান খান
আফফান রহমান খান