শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আমরা সবাই কমবেশি চিন্তিত। ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানো। বিভিন্ন ধরনের ডায়েট প্লান আছে যার মাধ্যমে আপনি ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে পারবেন । তবে আজ স্বাস্থ্য বার্তা পাঠকদের জন্য এমন একটি ডায়েট প্ল্যান দেয়া হল যার মাধ্যমে খুবই দ্রুত শরীরের ওজন কমানো সম্ভব। যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন এবং সামনে বড় কোন অনুষ্ঠান বা বিয়ের প্রোগ্রাম রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে এই ডায়েট প্ল্যানটি বেশ কাজে দিবে। তবে মনে রাখতে হবে যে কোন ডায়েট চার্টই কোন পুষ্টিবিদকে না দেখিয়ে গ্রহন করা উচিত নয়।
জি এম ডায়েট কি
আমরা অনেকেই জিএম ডায়েট সম্পর্কে শুনেছি । জিএম ডায়েট হলো জেনারেল মোটর কর্পোরেশন দ্বারা তৈরি করা একধরনের ওজন হ্রাসকরার উপযোগী চার্ট যা কিনা তাদের কর্মীদের দেহ অবয়ব ঠিক রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তাহলে জেনে নেয়া যাক কীভাবে মেনে চলবেন ৭ দিনের এই ডায়েট প্ল্যানটি।
১ম দিন
সাত দিনের এই জিএম ডায়েট এর প্রথম দিন শুধু মাত্র ফ্রেশ ফল খেতে হবে । অন্যকোন খাবার গ্রহন করা যাবেনা। তবে সকল ক্ষেত্রেই অনেক পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সারাদিন যেকোন ফল গ্রহন করতে পারেন তবে আপনাদের সুবিধার জন্য একটি চার্ট আমরা দিয়ে দিলাম।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা) – ১ কাপ আপেল, পানি ১-২ গ্লাস।
মাঝ দুপুরের খাবারঃ (সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা) – ১ বাটি কাঁচা পেঁপে, পানি ১- ২ গ্লাস।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)-১ বাটি তরমুজ বা ২ টা মালটা, পানি ১ – ২ গ্লাস ।
মাঝ বিকালের খাবারঃ (বিকাল ৪ টা থেকে ৪টা ৩০)-১ টা কমলা/টক ফল/মিষ্টি লেবু সাথে পানি।
সন্ধার খাবারঃ ( সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৬ টা ৩০ )-১ গ্লাস নারিকেল পানি।
রাতের খাবারঃ (রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০ )-১ বাটি তরমুজ ২ গ্লাস পানি।
২য় দিন
১ম দিন সম্পূর্ণ হবার পর ২য় দিন শুধু সবজি খেতে হবে । সেক্ষেত্রে ২য় দিন সবজি ছাড়া কিছুই খাওয়া যাবে না ।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা) – ১ কাপ সেদ্ধ আলু( ঘি, জল পাই তেল মাখন দিয়ে) পানি ১-২ গ্লাস।
মাঝ দুপুরের খাবারঃ (সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা) – ১ বাটি বাঁধা কপি বা লাল লেটুস(কাচা), পানি ১- ২ গ্লাস।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)-শশা ১ টা, টমেটো ১ টা, আধা সেদ্ধ বিট বা পেঁপে,পানি ১ – ২ গ্লাস ।
মাঝ বিকালের খাবারঃ (বিকাল ৪ টা থেকে ৪টা ৩০)-২ টা টমেটো ১ কাপ ছেরি, ফুলকপি আধা কাপ সেদ্ধ, পানি ২ গ্লাস।
রাতের খাবারঃ (রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০ )- লবন ও মসলা দিয়ে সেদ্ধ ব্রুকলি,ফুল কপি,১ গ্লাস পানি।
৩য় দিন
জি এম ডায়েটের মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক পথ শেষ । প্রথম একটু কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন । আজকে আপনাকে ফল ও সব্জির মিশ্রণ খেতে অনুমতি দেয়া হল। শুধু কলা বাদ দিতে হবে ।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা) – ১ টা আপেল,১ কাপ তরমুজ, পানি ২ গ্লাস।
মাঝ দুপুরের খাবারঃ (সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা) – ১ বাটি বরবটি পেপের সাথে মিশিয়ে সেদ্ধ করে, পানি ২ গ্লাস।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)-শশা, লেটুস, টমেটো আধা সেদ্ধ করে ১ বাটি, সাথে পানি।
মাঝ বিকালের খাবারঃ (বিকাল ৪ টা থেকে ৪টা ৩০)-১ টি কমলা বা পাকা আম,২ গ্লাস পানি।
রাতের খাবারঃ (রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০ )- সেদ্ধ ফুলকপি, তাজা সবুজ শাঁক সবজি, কাঁচা পেঁপে ১ বাটি, ২ গ্লাস পানি।
৪র্থ দিন
আজকের দিন আপনার জন্য চমক দিয়ে ভরা । যেখানে গত তিন দিন শুধু মাত্র সবজি ও ফল গ্রহণ করার অনুমিতি দেওয়া হয়েছে সেখানে চতুর্থ দিনের মাথায় আপনাকে তিনটি খাবার দেওয়া হল, কলা, দুধ ও সুপ ।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা – দিন শুরু করুন গরম দুধ ১ গ্লাস সাথে জোড়া কলা দিয়ে
মাঝ দুপুরের খাবারঃ (সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা) – কলা ও দুধ মিশ্রণ ।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)-১ বাটি সবজি সুপ, যেকোনো সব্জির হতে পারে।
মাঝ বিকালের খাবারঃ (বিকাল ৪ টা থেকে ৪টা ৩০)-১ টি কলা।
রাতের খাবারঃ (রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০ )- ১ বাটি সবজি সুপ, যেকোনো সব্জির হতে পারে।ও কলা ও দুধের মিশ্রণ ।
৫ম দিন
পঞ্চম দিনে , খাদ্য অনুসারীদের এখন গরুর মাংস ও টমেটো সঙ্গে মিশিয়ে খেতে অনুমতি দেওয়া হল। এটা আপনার শরীরের প্রটিনের চাহিদা মিটাবে ।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা) – অল্প আঁচে রান্না করা গরুর মাংস এবং স্যুপ সঙ্গে শুরু হতে পারে। মাংস প্রটিন,আয়রন এবং ফাইবার একটি উৎস হিসাবে শক্তি প্রদান করবে।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)- মাংস ও টমেটো দিয়ে তৈরি খাবার,কম তেলে একটু মশলা দিয়ে রান্না করে নিতে পারেন ।
রাতের খাবারঃ (রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০ )- মুরগির স্যুপ বা মাংস বল বানিয়ে খেতে পারেন।
প্রতিবার পানি খাবেন বেশি করে।
৬স্থ দিন
আজকে আপনার খাবার এ গরুর মাংসের পাশাপাশি সবজি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই কদিনে আপনার ওজন ১০ পাউন্ড কমে যেতে পারে ।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা) – ১ বাটি মিশ্র সবজি সালাদ।
মাঝ দুপুরের খাবারঃ(সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা) – গরুর একটি চাপ ছোট আকারের ।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)- মিশ্র সবজি ও গরুর মাংস যেকোনো ফর্মে খাওয়া যেতে পারে । আলু বা রুটি অন্তর্ভুক্ত করবেন না ।
রাতের খাবারঃ(রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০)-মিশ্র সবজি ও গরুর মাংস যেকোনো ফর্মে খাওয়া যেতে পারে। আলু বা রুটি অন্তর্ভুক্ত করবেন না।
৭ম দিন
আজ আপনার শেষ দিন কঠিন সাধনার । আজ আপনি বাদামি চালের ভাতের মাড় খেতে পারবেন । একই সময়ে খাদ্যফল এবং সব্জিতে ফিরে যায় । দিন ৭ এর মাথায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এখন আপনার শরীরে পাওয়া যাবে ।
সকালের নাস্তাঃ (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ৯ টা) – গমের রুটি একটা সাথে এক পিছ পেঁপে ।
মাঝ দুপুরের খাবারঃ (সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা) –আম ও কলা ছাড়া একটা ফল ।
দুপুরের খাবারঃ (দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা ৩০)-১ বাটি ভাত সাথে ১ বাটি মিশ্র সবজি সেদ্ধ । ইচ্ছা করলে ১ টুকরা আম খেতে পারেন ।
মাঝ বিকালের খাবারঃ (বিকাল ৪ টা থেকে ৪টা ৩০)-১ টি কমলা।
রাতের খাবারঃ (রাত ৮ টা থেকে ৮ টা ৩০ )- ১ বাট ভাত সাথে ১ বাটি মিশ্র সবজি সেদ্ধ।
মনে রাখতে হবে যে কোন ডায়েট চার্টই কোন পুষ্টিবিদকে না দেখিয়ে গ্রহন করা উচিত নয়।
ফারিয়া ইসলাম
এম এস, ফুড এন্ড নিউট্রিসান (ডি ইউ)
পুষ্টিবিদ(এফ কে নরওয়ে)
সহজ সামুদায়িক হাসপাতাল
ভারত পুর, নেপাল।