মা হবার প্রস্তুতি……………….

মা হবার প্রস্তুতি
ডা.সংগীতা হালদার রায়

“মা” হতে চাই মা শব্দটি আমাদের খুবই প্রিয়, সবচেয়ে বেশি আদর যত্ন এই ব্যক্তিটি করে থাকেন যে! একটা সময় ছিল যখন আমরা যৌথ পরিবারে বসবাস করতাম আর ‘মা’ হবার নাজুক সময়ে সবকিছু নিয়ে সাহায্যকারী অনেক আপন মানুষ ছিল যারা এগিয়ে আসতেন শারীরিক ও মানসিক সমস্ত প্রস্তুতির গাইড হয়ে।

এখনকার এই ব্যস্ততম সময়ে আর অনুপরিবারের যুগে এই ব্যপারটা খুবই মিস করি আমরা, বিশেষ করে মা হতে চাওয়ার মুহূর্তটিতে আর আর মা হয়ে গেলে। যতই আধুনিক হয়ে যাই আর যতই ব্যস্ত হয়ে যাইনা কেন, এসময়ে আপনজনের অভাব খুব বোধ করি আমরা।
Medschool এর পক্ষ থেকে তাই আজ মা হবার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে অল্প কিছু গাইডলাইন দেবার চেষ্টা করবো।
প্রথমত মানসিক চাপ সরিয়ে ফেলতে হবে মন থেকে। Conception ডাক্তারি ভাষায় neuroendocrine অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও হরমোনের তালমিলে কাজ করার মত একটি ঘটনা। ‘সন্তান হবে কিনা’ বা ‘এখনই হবে কিনা’ এসব চিন্তা মন থেকে একদম দূর করে দিতে হবে আমাদের হরমোনাল ব্যলান্স ঠিক রাখার জন্য।

হরমোনের প্রসংগে চলে আসে, ইনসুলিন হরমোনের কথা অর্থাৎ আমাদের রক্তে ডায়াবেটিস চেক করে নিতে হবে। রক্তে থাইরয়েড হরমোন লেভেলের পরিমাণটি জেনে নিতে হবে এবং কোন ধরনের অসামানযস্য যদি এই দুটি হরমোন লেভেলে থাকে তবে ডাক্তারের সাথে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। আর ঔষধ খাওয়া মানে আপনি অসুস্থ, তা নয়। মানে হল আপনি সুস্থ থাকতে চাচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন, কেমন?

রক্তে হিমোগ্লোবিন সহ অন্যান্য কিছু নিয়ামক আছে যা কম বেশি বা উপস্থিতি – অনুপস্থিতির উপরে নির্ভর করে আপনার গর্ভকালীন স্বাস্থ্য আর পরবর্তীতে আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যও। উদাহরণস্বরূপ থ্যালাসেমিয়া রোগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আর মনে করিয়ে দিতে চাই যে সন্তান যেহেতু বাবা এবং মা দুজনেরই, কাজেই রক্তের পরীক্ষা দুজনকেই করাতে হবে।
STD বা যৌন সংসর্গজনিত রোগ সমূহ যাচাই এর জন্যেও রয়েছে কিছু পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষাগুলোর জন্যে হবু বাবা- মা দুজনের রক্তের নমুনাই দিতে হবে। একটি সুস্থ সুন্দর হাসিমুখ যতটা সুখ এনে দেয়, তার চেয়েও লক্ষ গুণ বেশি কষ্ট বয়ে আনে অসুস্থ সন্তানের চেহারা। কাজেই লজ্জা বা অস্বস্তিকে দূরে ঠেলে পরীক্ষাটি করে ফেলতে হবে।

Pap smear এর সাথে আজকাল আমরা অনেকেই পরিচিত, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত বা পরবর্তীতে জন্মান্ধ শিশু জন্ম প্রতিরোধ করতে চাইলে এটি করে ফেলাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।

নিজের রক্তচাপ, এজমা, মৃগি সহ বিগত যেকোন রোগ এবং তার চিকিৎসার বিবরণ জানাতে হবে আপনার ডাক্তারকে।
এমনকি Skin এর চিকিৎসাতেও এমন ঔষধ রয়েছে যা খেলে পরবর্তী এক বছরের মাঝে সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তার জন্মগত ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা আছে। কাজেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তথ্যও গুছিয়ে জানাতে হবে, কেমন?
ধূমপান বাবা বা মা যিনিই করুন, ত্যাগ করাই অনাগত সন্তানের পক্ষে মংগলময়। আর passive smoking যে আরো বেশি ক্ষতিকারক তা এখন আমরা সবাই জানি।

ক্যাফেইনের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে, এমনকি কোকাকোলা – স্প্রাইটেও ক্যাফেইন থাকে। কাজেই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাটাই বরং স্বাস্থ্যসম্মত।

ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্টারী ঔষধ ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে নিজেকে ও অনাগত সন্তানকে সুস্থ রাখার জন্যে।

প্রয়োজনীয় টিকা যেমন টিটেনাস, জন্ডিস ইত্যাদি, আগে দেননি বা শেষ করেননি ভুল বশত, তা দিয়ে ফেলতে হবে। একটা এপয়েন্টমেন্ট নিন আপনার ডেন্টিস্টেরও। মাঢ়ির কিছু কিছু রোগ আছে যা সম্পর্কে আমরা সচেতন নই, কিন্তু তা হৃদরোগ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম।

ব্যাস, এবার হাসিখুশি থাকুন আর ব্যাংকে প্রয়োজনীয় অর্থসঞ্চয় করুন আপনার আগামীকে মাথায় রেখে। শুভকামনা

লিখেছেনঃ ডা. সংগীতা হালদার রায়