পুষ্টিকর যে খাবার গুলো শিশুরা পছন্দ করে
শিশুর পছন্দের পুষ্টিকর খাবার। আমাদের বাচ্চারা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের সঠিক বুদ্ধি যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাচ্চার জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮০ দিন পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং ৭ মাসের শুরু থেকে ১ বছরের মধ্যে আমরা যা খাই মোটামুটি সেসব খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে।
শিশুর বয়স ১ বছরের পর থেকে কি কি খাবার কিভাবে দেয়া উচিত তাই নিয়ে আজ আমদের ছোট্ট আয়োজন। আজকে আমি বলবো পুষ্টিকর যে খাবার গুলো শিশুরা পছন্দ করে। এই বয়সী বাচ্চারা মোটামুটি সব খেতে পারবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবার তালিকায় যেন শর্করা আমিষ, ফ্যাট,ভিটামিন, মিনারেল, পানি এই ৬ টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে।
খাবার দেয়া যেতে পারে ভাত, নুডুলস, আটা রুটি, পাউরুটি, সুজি, সবুদানা ইত্যাদি। সুজি রান্নার সময় অবশ্যই সয়াবিন তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। এতে বাচ্চা পর্যাপ্ত ফ্যাট পাবে। একই খাবার বাচ্চারা দিনের পর দিন খেতে চায় না। এজন্য চেঞ্জ করে দিতে হবে। ভাত খেতে না চাইলে মাঝে মাঝে খিচুড়ি, পোলাউ, ফ্রাইড রাইস দেয়া যায়। প্রতিদিন ২ টা ডিম দিতে পারলে ভালো। ডিম খেতে না চাইলে নুডুলস, ফ্রাইড রাইস এর সাথে ডিম অথবা ডিমের বিভিন্ন নাস্তা ,পুডিং, কাস্টার্ড, ডিমের হালুয়া দেয়া যায়। সবজি খাওয়ানো আরেকটা ইম্পসিবল ব্যাপার সেজন্য ভাতের সাথে সবজি ভালো করে চটকে খাওয়ানো যায় । এছাড়া সবজি বড়া, সুপের সাথে অথবা সবজি বিভিন্ন ডিজাইন করে কেটে বাচ্চাদের আকর্ষণ বাড়ানো যায়।
১ বছরের পর বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আয়রন এর চাহিদাও বাড়তে থাকে। তাই পর্যাপ্ত আয়রন না পেলে আয়রন deficiency anaemia তে ভুগে বাচ্চা ফলে গ্রোথ ঠিকমতো হয় না, বাচ্চা খিটখিটে হয়ে যায়, সহজেই রোগাক্রান্ত হয়।
তাই লক্ষ করে আয়রন রিচ খাবার লালশাক, কচুশাক, পালং শাক, ডিমের কুসুম, সীম, ফুলকপি,বরবটি, সিং, ইলিশ, রুই মাছ, আনার, খেজুর, আনারস ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
আমাদের দেশে বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। এখানে জেনে রাখা ভালো গরুর দুধে আয়রন অনেক কম থাকে। এইজন্য বাচ্চাদের বিভিন্ন iron fortified ফর্মুলা মিল্ক খেতে দেয়া যেতে পারে। এক দুই বছরের বাচ্চাদের দুধের সাথে মাখন এবং মার্জারিন দেয়া যায়.এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়।
বাচ্চারা না খেতে চাইলে অনেকেই খাবার ব্লেন্ড করে দেয়.এতে খাবারের গুনাগুন অর্ধেক হয়ে যায়, বাচ্চা খাবারের আসল স্বাদ বুঝতে পারেনা,শক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেনা।
আরেকটা জিনিস.বাচ্চারা সবসময় চিপস, চকোলেট, জুস ইত্যাদি বাইরের খাবার খেতে চায়। এইগুলা মুখরোচক খাবার, খেলে ওদের ছোট্ট পেট ভরে যায়. পরে ওরা আর মেইনমিল খেতে চায় না । জাঙ্ক ফুড.নাগেট, সসেজ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি খাবার খেতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। যেসব বাচ্চারা স্কুল এ যায়, তারা বড় একটা সময় স্কুলে কাটায়। ওদের তাই টিফিন টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে একই রকম খাবার না দিয়ে দুই তিন রকমের খাবার প্রতিদিন দেয়া যায়। যেমন একদিন পাউরুটি জেলি,একটা ফল, ২ বা ৩ টা নাগেট.আরেকদিন নুডুলস, ফল,সবজি বড়া। এতে বাচ্চা বোর হয় না। কিন্তু যদি ৫ বা ৭ তা নাগেট সসেজ দেয়া হয় তবে অনেক ক্ষতি হবে। পানি না দিয়ে মাঝে মাঝে ট্যাং,লেবুর শরবত দেয়া যায়।সকালে বাচ্চা যাতে খালি পেটে না যায়। অন্তত ১ টা ডিম ১ কাপ দুধ খাওয়ানো যায়। অসুস্থ্যতার সময় খাবারের দিকে স্পেশাল যত্ন নিতে হবে। এ সময় বাচ্চার মুখে রুচি কমে যায়, হজমশক্তি কমে যায়। তাই সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়াতে হবে। জোর করা যাবে না। সুস্থ হবার পর মিনিমাম ১৫ দিন নিয়মিত খাবারের চেয়ে ২ টা এক্সট্রা মিল দিতে হবে।মনে আগে ৪ বার দিলে এখন ৬ বার দিতে হবে।
সবার বাচ্চারা ভালো থাকুক। শেষে এটুকুই বলবো মোটাসোটা মানেই সুস্থ বাচ্চা নয় আর শুকনা পাতলা মানেই অসুস্থ বাচ্চা নয়।
আজ এখানেই শেষ করছি । ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
লিখেছেনঃ
ডা.ইশরাত ইমরোজ স্বর্না
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইশফি