বেপর্দার বিপরীত শব্দ হিজাবী না। হিজাব এই সময়ে একটা পোষাক। ডা শিরীন সাবিহা তন্বী

হিজাব

 

বেপর্দার বিপরীত শব্দ হিজাবী না।

হিজাব এই সময়ে একটা পোষাক।

কিংবা একটা ফ্যাশন।

বহু হিজাবীদের লিপষ্টিকের রং আর গাঢ়ত্ব ঘনত্ব দুই ই বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়ে মেকাপের পুরুত্ব।

 

আরেহ!এই ছেলেটা?ফেসবুকে কবিতা লেখে? ও তো খারাপ। কাজ নাই কর্ম নাই।সারাদিন অনলাইনে।এই সেই আবিজাবি প্রেমের কবিতা!

ঐ মেয়েটা?ওর ফেসবুকে ফ্রেন্ড সংখ্যা জানেন?একটা মেয়ের কত হাজার ফ্রেন্ড আবার হাজার হাজার ফলোয়ার!সে আবার লেখক!ফেসবুকে আবার লেখালেখি কি?এ নিশ্চয় ই ফালতু মেয়ে!

ফেসবুকে লেখালেখি করলেই মেয়েটি ফালতু হয়ে যাবে,ছেলেটি চরিত্রহীন হয়ে যাবে এই কথা কোন কিতাবে লেখা আছে?বরং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই খোলা মনের সৃষ্টিশীল মানুষরাই লিখছে।লেখালেখি ফালতু হলে রবীন্দ্রনাথ কি?নজরুল?শরৎচন্দ্র?

তাহারা যা আপনি আমি তা হলে আমি তো খুশীতে তা ধিন ধিন!আপনার ও নিশ্চয় ই আপত্তি হবে না!

তবু আমরা বাঙ্গালীরা খুব সহজেই জাজমেন্টাল হই।নিজের উন্নতি কিংবা দেশ দশের সমাজের সামগ্রিক উন্নতির থেকে কাকে কিভাবে ছোট করা যায়,বাঁশ দেয়া যায় – সেই ধান্ধায় মগ্ন থাকি।

আমরা খুব সহজেই অমুক মেয়েটি কালো।অমুক ছেলেটি বেঁটে।অমুচের চাকরী ছোট।অমুখের বেতন ভালো না বলে গসিপে লিপ্ত হই।স্কুলে ছোট ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ও আমরা ছাড় দেই না।অমুক মেয়েটির নাক বোঁচা।অমুক ছেলেটির বুদ্ধি কম।অমুকের নাক উঁচু।অমুকের বাপের মাথায় টাক।
আসলেই কি এগুলো আলোচনা সমালোচনার কোন বিষয়?

আমাদের পারিবারিক আবহে আমরা খুব সহজেই দল গঠন করে ফেলি।আমার মা আমার বোন – এরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রূপবতী,গুনবতী!এদের ডেডিকেশনের কোন তুলনা হয় না।
দিনান্ত পরিশ্রম করার পর ও ননদ বা দেবর যখন বলবে ভাইয়া তোর বউ তো এই করে বেড়ায়,তোর বাচ্চা মানুষ হবে কি করে!
তখন তারা ভাবে না এই কমেন্ট কত বড় নেগেটিভ কমপ্লিমেন্ট হয়ে একটা সংসার ধংস করে ফেলছে।

পক্ষান্তরে আপনি যখন দিন রাত খাটাখাটনীর পর ও স্ত্রীর বাপ ভাইয়ের সাথে এক দৃশ্যমান তুলনার অদৃশ্য শিকার প্রতিদিন হন।আপনার কোন কিছুই তাদের মতো পারফেক্ট না,তখন আপনার প্রতিদিনের আটপৌড়ে জীবন টা রংহীন হতে বাধ্য।

প্রিয়জনের একটু খোঁচা,তুমি তো বেপর্দা।দেখেছো,অমুক কেমন পর্দানশীল! হিজাবী!
একটু থামুন ভাই।

বেপর্দার বিপরীত শব্দ হিজাবী না।হিজাব এই সময়ে একটা পোষাক।কিংবা একটা ফ্যাশন।বহু হিজাবীদের লিপষ্টিকের রং আর গাঢ়ত্ব ঘনত্ব দুই ই বাড়তে থাকে।সেই সাথে বাড়ে মেকাপের পুরুত্ব।

পর্দা মানুষের মনে থাকে।একজন শালীন পোষাকের সহবত জানা ভদ্র নারী বহু হালফ্যাশনের হিজাবীদের থেকে অনেক বেটার।ফেসবুক ভর্তি হিজাববিহীন ওড়না বিহীন,বেড রুমে,সমুদ্র তটে চিৎ পটাং হওয়া বহু ছবি পাবলিক করে দুনিয়াকে দেখাচ্ছে যিনি আর আপনার সামনে হিজাবী ঢং করছে!তাকে তুলনা করে অন্যদের বেপর্দা বলার ভুল না করাই ভালো।

তাই ভুল মানুষকে হাই লাইট করতে গিয়ে ঠিক মানুষ গুলোকে তোপের মুখে না ফেলি।

ঘুষ,দুর্নীতি,মাদক,ধর্ষন,চোরাচালান,জঙ্গীবাদে জড়িত মানুষ গুলো আপনার আমার এই সমাজেই আছে।
সমাজ টাকে শখের লেখক মুক্ত না বরং ক্রিমিনাল মুক্ত করতে হবে।
তাই অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হউন।

কোন মেয়েটি স্বামীর অত্যাচার সহ্য না করে ডিভোর্স করে নতুন সংসার করছে,কোন ছেলেটি অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে এসে সেলিব্রেটি হয়েছে তাদের পিছনে বাঁশ নিয়ে না ঘুরে ফুলের তোড়া নিয়ে ঘুরুন।অভিনন্দিত করুন।
আর সত্যিকারের অপরাধীদের পারলে আইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়ে মেমোরেবল পিটুনী দিয়ে চৌদ্দ শিকের ভিতরে পাঠান।
তবেই সমাজ টা হবে দুর্নীতিমুক্ত!হবে নির্মল এবং সুন্দর!!!

হিজাব

ডা শিরীন সাবিহা তন্বী

Related posts

Leave a Comment