হবু মায়েদের জন্য কিছু কথা

হবু মায়েদের

হবু মায়েদের জন্য কিছু কথা

 

খুবই সংবেদনশীল ব্যাপার, এবং খুবই বেদনাময় ব্যাপার; একজন মায়ের মৃত সন্তান হয়েছে বা নবজাত সন্তান মারা গিয়েছে।

আমার নিজের একটি মিস ক্যারেজের হিস্টরি আছে, আবার হাসপাতালে যেসব অবহেলা হয় তার স্বীকারও হয়েছি ডাক্তার হয়েও। তবুও কিছু কথা ডাক্তার হিসেবে বলতে চাই সেসব হবু মায়েদের জন্য, যারা আতংকিত হয়ে গেলেন। প্রেগ্নেন্সির সময়ে এ জাতীয় ভিডিও দেখে কেউ যেন আতংকিত হয়ে না যান সেজন্যেই শেয়ার করতে চাচ্ছি আর আবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারো অনুভূতিতে আঘাত করে থাকি যদি,

১) P/V/E বা জোনিতে আংগুল দিয়ে এটি ৪ সেমি এর বেশি প্রসারিত হল কিনা + বাচ্চার মাথা নিচে এলো কিনা + পানি আছে কিনা যাচাই করার একটি পরীক্ষা। এটি ১ ঘন্টা পরপরই করবার কথা। ক্ষেত্র বিশেষে ১.৫ ঘন্টা পরপর করা যেতে পারে। কিন্তু বেশি দেরী করলে বাবুর মাথা নিচে নেমে গেলে বা পানি ভেঙে গেলে আর সেটা খেয়াল না করলে অসুবিধে হতে পারে।

২) ১৬ ঘন্টা চেষ্টা না করে বা নরমাল ডেলিভারির ট্রায়ালে না রেখে সিজারিয়ান সেকশনে যাওয়া নরমাল কন্ডিশনে উচিৎ না। সেটা ডাক্তারদের জন্য আন-ইথিকাল

৩) পেটে কন্ট্রাকশন বেশি কিন্তু ভ্যাজাইনাল ওপেনিং আশানুরূপ নয় এবং গর্ভস্থ সন্তান নিচে নামেনি – এরকম কন্ডিশনে ড্রিপের ঔষধের ডোজ কম যাবার ব্যবস্থা করে ট্রায়াল দেয়াটা উচিৎ

৪) সিজারিয়ান সেকশন বা যেকোন অপারেশনের ৬ ঘন্টা আগে কিছু না খেয়ে থাকাটাই উচিৎ। তা নাহলে এনেস্থেশিয়ার সময়ে অসুবিধে হতে পারে। আর পেশেন্ট যেহেতু একবার সিজারিয়ান এর ডিমান্ড করেছেন + কন্ডিশন ওদিকেই যাচ্ছিল – তাকে খেতে দেয়াটা উচিৎ হত না।

এই কথাগুলো কোন বই বা গুগুল বা কোন আপন বলে জানেন এমন ডাক্তারের থেকে শুনে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন। যাচাই করে নিতে পারেন আমি ভুল বলছি কিনা সহকর্মীদের সাপোর্ট করবার জন্য আবারো বলি, এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য ওই মায়ের দোষ/ভুল ধরিয়ে দেয়া নয়। বরং অন্য কোন হবু মা দেখে থাকলে তার দ্বিধা কাটিয়ে ভয় দূর করা। এবং সেই মায়ের কাছাকাছি কেউ দেখলে তাদের মানসিক কষ্টটা একটু কমানো।

তবে তিনি যে অবহেলাটা ফিল করেছেন বলে বলছেন সেটা একেবারেই অসত্যি না-ও হতে পারে আবার হতেও পারে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই কথা বলবার ম্যানারস জানেনা। সঠিক একটা বিষয় নিয়ে আন্দোলন হলেও তারা শিক্ষকের ঘরবাড়ি ভাঙাটাকে প্রতিবাদের ভাষা বানায়। নব্য বিবাহিতকে ‘কবে বাচ্চা নিবা’ জিজ্ঞেস করাটা এখনো এদেশে কৌতূহলের অংশ। কাজেই, হতেই পারে যে যারা ডিউটি ডাক্তার ছিলেন তারা বুঝিয়ে ভালো করে কথা বলেন নি।

সেটা অত্যন্ত দু:খজনক কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ খ্যাচখ্যাচ করেই কথা বলে। সেই মা-ও কিন্তু নার্সের সম্পর্কে অভিযোগ করতে গিয়ে ভিন্ন ধর্মালম্বীর নার্সের ব্যাপারটা উল্লেখ করছিলেন এতো শোকগ্রস্ত অবস্থাতেও!

আমরা আর দশটা পেশাজীবী মানুষের মতই রক্ত মাংসের মানুষ আর অন্যদের মতই গায়ে খেটে ও মেধা বিক্রি করে টাকা আয় করে ঘর চালাই- সন্তান পালন করি।

আমরা ভুলত্রুটির উর্ধ্বে না, আর দশজনের মতই। আমরা ডাক্তাররা চিকিৎসার বিনিময়ে টাকা পাই ঠিকই কিন্তু রোগী সুস্থ হয়ে গেলে যে মানসিক তৃপ্তিটা পাই তার তুলনা কোন কিছুতে হয়না, বিশ্বাস করুন প্লিজ আমার এই কথাটা।

 

হবু মায়েদের

ডা. সংগীতা হালদার রায়

সুলেখক

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সংগীতা হালদার রায়, হিমাদ্রি শেখর রায়

Related posts

Leave a Comment