মাসিকের সময় স্বাস্থ্যভাবনা
মেয়েদের মাসিক চলাকালিন স্বাস্থ্যগত করনীয় কাজ । নারীদের রজঃস্রাব বা মাসিকের সময় স্বাস্থ্যভাবনা আর তা নিয়ে কথা বলাটা উপমহাদেশীয় অঞ্চলে অনেকটাই লুকোছাপার বিষয়। এই একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও যেখানে আমরা ছেলে মেয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসার থেকে অফিস আর দোকান থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা ভাবছি, সেখানে যে কারো স্বাস্থ্য সম্পর্কেই আমাদের সহজভাবে চিন্তা করার সামর্থ্যও রাখতে হবে।
আজকে তাই যাদের প্রথমবার রজঃস্রাব বা মাসিক হচ্ছে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিতে চাই,
১) প্রথম কথাই হল, এতে ভয় পাবার কিছু নেই। এটি শরীরের স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সহজভাবে যদি বলি তবে, মেয়েদের শরীরে থাকে জরায়ু আর জরায়ু যেহেতু প্রজনন অংগ, তাকে ঈশ্বরপ্রদত্ত ভাবেই প্রতি মাসে নতুনভাবে maintenance এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কাজেই এর সবচেয়ে ভিতরের layer প্রতি মাসেই নতুন করে গড়ে ওঠে। এসময়ে ভয় না পেয়ে জানাতে হবে মাকে, বা বিদ্যালয়ে থাকাকালীন শ্রেণী শিক্ষিকাকে বা বড় বোনকে। তারা অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করতে পারবেন, কেমন?
২) নিজের প্রজননাংগ রাখতে হবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কেননা রক্ত যখনই শরীরের বাইরে আসে, তখন তা ব্যাক্টেরিয়া জন্মের ও বৃদ্ধির জন্য খুবই ভালো মিডিয়াম। ব্যবহার করতে হবে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও পরিস্কার অন্তর্বাস।
৩) ৪-৬ ঘন্টা পরপর অবশ্যই স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলাতে হবে। যদি ফ্লো বেশি হয় ও কাপড়ে দাগ পরে যায় তবে ২-৩ ঘন্টা পরেও পাল্টাতে পারো। প্রতিবার স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলের সময় সামনে থেকে পেছনে সাবান দিয়ে পরিস্কার করতে হবে, কখনোই পেছন থেকে সামনে নয়। নতুবা পায়ুপথ সংলগ্ন এলাকার জীবাণু সামনের দিকে চলে আসতে পারে। মনে থাকবে তো?
৪) প্যাড-র্যাশ হলে এন্টিসেপটিক অয়েনমেন্ট ব্যবহার করতে পারো। তবে তা যেন না হয় সেজন্য খুব বেশি ভিজে যাবার আগেই ন্যাপকিন বদলে ফেলতে হবে
৫) এ সময়ে প্রোটিন, লৌহ জাতীয় খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য অধিক পরিমাণে খেতে হবে। যেমন – মাছ, ডিম, দুধ, মাংস, ডাল, পালং শাক, কচুশাক, লতি ইত্যাদি যেন প্রতিদিনকার খাবারে থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
৬) শুরুর দিকে অনেক সময়েই পেটে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে, এতেও ভয়ের কিছু নেই। উষ্ণজলের ব্যাগ দিয়ে তলপেটে শেক নিলে আরাম পেতে পারো। স্বাভাবিক চলাফেরা থামিয়ে দেবার দরকার নেই।
৭) আজকাল পিরিয়ড ট্র্যাকিং অনেক app আছে, সেরকম একটি app ডাউনলোড করে নিলেই তোমাদের আগে থেকে সতর্ক থাকা সহজতর হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাগে ন্যাপকিন রাখলে বিব্রত হতে হবেনা তোমাদের।
৮) সবশেষের কথাগুলো ছেলে – ভাই – সহশিক্ষার্থী – মামা – চাচা দের জন্য, মাসিক শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক ঘটনা। এসময়ে বোন – ক্লাসমেট – কলিগকে বিব্রত না করে বরং ভাববেন নিজের মায়ের কথা, তারও এমন হয়েছে আর সেজন্যেই আপনি পৃথিবীর বুকে হেটে চলে বেড়াচ্ছেন। মায়ের সেই ঋণ না হয় আশেপাশের মেয়েদের জিন্য সংবেদনশীল আচরণ করে খানিক শোধ করুন। অন্য কেউ বিব্রত করতে চাইলে দাঁড়ান দেয়াল হয়ে।
সবার জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য হোক আমাদের অংগীকার।
ডা সংগীতা হালদার
[…] ডা. সংগীতা হালদার রায় […]