পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ
আসছে পহেলা বৈশাখ! বৈশাখ মানেই আনন্দ, ঘোরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া আর সাজুগুজু। বৈশাখ মানেই গ্রীষ্ম কালের শুরু। যেহেতু সারাদিন কম বেশি গরম থাকবে, সেহেতু আমাদের ছোট থেকে শুরু করে বড় সবাই ঘামবে, ক্লান্ত হয়ে পরবে। এইদিনে হাটাহাটি একটু অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি হয়, তাই শরীরের ঘাম ও তুলনামূলক বেশি ঝরবে।
মানুষের শরীর ৬০ শতাংশ জল দিয়ে তৈরি এবং যদি আপনি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যান, তাহলে সমস্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ প্রভাবিত হয়। এটি প্রতিরোধ করার জন্য একজন ব্যক্তির যতটুকু পানির প্রয়োজন তা নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব , বয়স, ওজন, শারীরিক কার্যকলাপের স্তরের এবং পরিবেশগত তাপমাত্রার উপর নির্ভর। অনেকেই ভাবেন শুধুমাত্র পানি পান করেই শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করা হয়, আসলে ২০% পানির ঘাটতি আমরা আমাদের খাবার থেকেও পূরণ করি।
একজন পুষ্টিবিজ্ঞানী এবং পুষ্টি পরামর্শদাতা হিসাবে বলতে চাই, তাজা, স্বাস্থ্যকর কিছু পানি জাতীয় সবজি এবং ফল পাওয়া যায় এই গ্রীষ্ম কালে, যা খেলে পানির চাহিদা অনেক খানি পূরণ করা সম্ভব।
বৈশাখের এই দিন যেই খাবার গুলো খেলে ঘাম ঝরলেও ডিহাইড্রেটেড হবেনা সেই সব কিছু খাবারের কথা নিচে বলা হল-
তরমুজ:
তরমুজের প্রায় ৯০ শতাংশ জল, তাই নিঃসন্দেহে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার ভাল মাধ্যম । এটি হজম করতে সাহায্য করে এবং স্টমাক ঠাণ্ডা রাখে। “তরমুজ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে, ব্রণ পরিষ্কার করে এবং একটি নিস্তেজ ত্বক কে উজ্জ্বল করে।
লেবুর রস ও পুদিনা পাতার শরবত:
দুই টুকরা লেবুর সাথে পুদিনা পাতার রস দিয়ে এক গ্লাস শরবত এই দিনের জন্য খুবি কার্যকরী। এটি একটি লিভার সংশ্লেষ হিসাবে কাজ করে, আপনার বিপাক বৃদ্ধি করে।
সালাদ:
সবুজ সবজি এবং টক ফল দিয়ে সালাদ তৈরি করলে তা থেকে আমরা ৮০% ই পানি পেয়ে থাকি। এছাড়াও এই সালাদ থেকে আমরা অনেক পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি যেমন, ফোলেট, ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, যা আপনার চোখ এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে ।
দই:
নিয়মিত প্লেইন দই ৮৫% থেকে ৮৮% পানির চাহিদা পূরন করতে পারে। এছাড়া ও দই এ ক্যালসিয়াম , কিছু ভিটামিন বি (যথা B12 এবং riboflavin) এবং পেটের সমস্যার জন্য robiotics পাওয়া যায়।তাই পহেলা বৈশাখ এর দিন দই দিয়ে শরবত করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া ও বৈশাখ এর দিনে আমাদের বাঙালী উৎসব হিসেবে পান্তা আর ইলিশ খায় যেটাতেও রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান।
নিচে পান্তাভাত এবং ইলিশ মাছের পুষ্টি গুন দেওয়া হল-
পান্তা ভাত:
পেটের জন্য উপকারী। গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার জন্য পান্তাভাত উপকারী। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে পান্তাভাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বক সুন্দর রাখে।
ইলিশ মাছ:
ইলিশ মাছ কম চর্বিযুক্ত এবং ওমেগা – ৩ সম্পন্ন যা হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে এবং রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মাছে উপস্থিত ইপিএ এবং ডিএইচএ – ওমেগা -৩ আপনার শরীরকে ইইকোসানোয়ডস তৈরির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। স্মরণ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
কিছু কিছু খাবার এই দিনে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন-
যেমন-
১.চিনিযুক্ত ঠাণ্ডা পানীয়
২. শুষ্ক ফল
৩.তেল, চর্বি যুক্ত খাবার ইত্যাদি।
তাই সব শেষে বলব এই দিন টাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আপনাকে অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে, এজন্যই এই দিনের খাবার গ্রহণ সম্পর্ক এ সতর্ক থাকুন। তাজা সবজি এবং ফল বা ফলের জুস, সালাদ খান বেশি করে।
সুস্থ্য থাকুন সুন্দর থাকুন এই সুন্দর দিনটিতে।
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম
ল্যাব এইড হসপিটাল, মিরপুর