গত কিছুদিন যাবত আমাদের দেশে সবচেয়ে ভাইরাল হয়েছে যে ইস্যুটি সেটি হলো “ধর্ষণ ইস্যু”..ফেসবুকে ঢুকলেই এই ইস্যুর পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতামত চোখে পড়ছে!..কেউ কেউ মেয়েদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ছেন তো কেউ কেউ ছেলেদের একহাত নিয়ে রাখছেন!…আবার কিছু অতিবুদ্ধিজীবি মানুষ আছেন যারা আবার ফেসবুক ইউজ করে শুধু ইস্যু লাভের ধান্দায়!..এই দুর্লভ প্রজাতির মানুষজনের একটা ইস্যু পাইলেই হইলো!আর কিছু বাছবিচার করার টাইম নাই এনাদের!..ইহারা মোশাররফ করিম কেও নাস্তিক বানায় দেয় না বুঝেই!
এই বিষয়ে কেউ তর্ক করার আগে জানতে চাই আপনি কি ওনার ভিডিও টা দেখেছেন মন দিয়ে?? উনি কি বলেছেন?বলেছেন ধর্ষণের পিছনে আসলে মানুষের মানষিকতাই দায়ী…কথাটা অবশ্যই ঠিক আছে!তা না হলে কিভাবে সাড়ে ৪ বছরের মাদ্রাসা ছাত্রী মসজিদের ইমাম দ্বারা ধর্ষিত হয়?? কিভাবে ৯ বছরের বাচ্চা মেয়ে ৪৫-৫০বছরের কুলাঙ্গার দ্বারা ধর্ষিত হয়?? কেনই বা আপনার আমার পর্দাশীল এমনকি বোরখা পড়া বোনটাও ধর্ষকের লালসার হাত থেকে রেহাই পায়না??
উনি এটাও বলেছেন যে উনি নারীদের পোশাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী…আচ্ছা উনি কি নারীদের অশালীন কিংবা ছোট পোশাক পড়তে বলেছেন?? নাকি নারীদের এমন কোনো পোশাক পড়তে বলেছেন যাতে সমাজে আমাদের মা-বাবা ভাইবোন নিয়ে চলতে কষ্ট হয়?আর পোশাকের স্বাধীনতা মানে যে অশালীন-ছোট পোশাক এটাই বা আপনি কোথায় পেলেন??আচ্ছা, মুসলিম হয়ে কিভাবে আপনি আমি না জেনে বুঝেই আরেকজন মুসলিম কে নাস্তিক বানায় ফেলি!?
আরেকটা কথা….আমাদের ধর্মে কিন্তু নারী পুরুষ উভয়কেই সংযত থাকতে বলা হয়েছে এবং উভয়ের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করতে বলা হয়েছে…শুধু নারীকে না আবার শুধু পুরুষকেও না!
এমনকি পুরুষদের রাস্তায় চলার পথে কোনো মেয়ের দিকে একবার চোখ পড়লে সাথেসাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে এবং এটাও বলা হয়েছে দ্বিতীয়বার ওই মেয়ের দিকে চোখ যাওয়ার সাথেসাথেই গুনাহ গণনা করা শুরু হবে!
আবার নারীদের ক্ষেত্রেও কিন্তু পোশাকের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে!পোশাকের পরিপূর্ণ বিধান দেওয়া হয়েছে নারীদের জন্য যেটা প্রায় সব নারীরাই জানেন,হয়তো মানেন না।
কুরআন মাজীদে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছেঃ ‘‘মু’মিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে, এ নীতি তাদের জন্যে অতিশয় পবিত্রতাময়। আর তারা যা কিছু করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ মাত্রায় অবহিত।’(সূরা আন-নূরঃ৩০)’
কেবল পুরুষদেরকেই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কেও বলা হয়েছেঃ ‘‘মু’মিন মহিলাদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে।’’ (সূরা আন-নূরঃ ৩১)
এ দু’টো আয়াতে একই কথা বলা হয়েছে- দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা সংরক্ষণ, কিন্তু এ একই কথা পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে এবং মহিলাদের জন্যে তার পরে স্বতন্ত্র একটি আয়াতে বলা হয়েছে। এর মানেই হচ্ছে এই যে, এ কাজটি স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই সমানভাবে জরুরী।আর দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা কিন্তু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ হলে অবশ্যই লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা পাবে।আর লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষিত হলে ধর্ষণ নামক ব্যাধি থেকেও সমাজ অচিরেই রেহাই পাবে।
আসলে ছেলেরা দৃষ্টি সংযত রেখে চললো কিন্তু মেয়েরা উগ্র পোশাকে চলাফেরা করতে থাকলো এতেও কিন্তু সমস্যার প্রকৃত সমাধান হবেনা!কারণ প্রকৃতি সবকিছুতেই ভারসাম্য পছন্দ করে।এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু সবাই মানতে নারাজ!…আর মার্জিত ও শালীন পোশাক পড়েও যে মেয়েদের পোশাকের স্বাধীনতা রক্ষা করে চলা যায় এটা আপনার আমার মা-বোনের চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কে হতে পারে!? (এখানে আমি পার্ভার্টদের নিয়ে কথা বলিনি।এদের নিয়ে আসলে কিছুই বলার নাই…এদের জনসম্মুখে ব্রাশফায়ার করে মারা উচিত!)
তাই আসুন আমরা নারীর সংযম আগে না পুরুষের সংযম আগে এই যে ডিম আগে না মুরগি আগে টাইপ উদ্ভট চিন্তাভাবনা এবং তর্ক করা বাদ দেই!নিজ নিজ জায়গা থেকে ছেলে মেয়ে উভয়েই সংযত হই!নিজে সংযত থাকি অন্যকেও সংযত থাকতে অনুপ্রাণিত করি…আর হ্যাঁ!অন্যের সংযম নিয়ে কথা বলার আগে নিজের সংযম নিয়েই আগে চিন্তা করি…নিজেই আগে সংযত হই…এটাই বরং সমাজের জন্য বেশি কল্যাণকর….ভুলে যাবেন না, আমাদের ধর্মেই কিন্তু বলা আছে নিজের নফস বা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই বড় জিহাদ!
[বি.দ্রঃ বাস্তব জীবনের সাথে কেউ নাটক-চলচ্চিত্রকে মিলাতে আসবেন না দয়া করে!রিয়েল লাইফ ইজ নট ফ্যান্টাসি!এটি আমার মুক্তচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ব্যতিত আর কিছুই না!
লিখেছেনঃআরফান বাবু