কাউন্সেলিং কি ? কাউন্সেলিং কিভাবে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে?
কাউন্সেলিং ? আধুনিক জীবন-যাপন প্রণালী অনেক চাপ পূর্ণ ও জটিল অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। আমরা সবাই আজ কোন না কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন থাকি। এমন কাউকে হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না যে একবারও না বলেছে যে “আমি আর পারছি না।” অথবা আমি বুঝতেছি না কোন পথে যাবো বা কি করবো?
সমস্যার মুখোমুখি হওয়া ও সমাধান করা খুবই কষ্টকর এবং আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষেরই তা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কম। আমরা এড়িয়ে যাবার ভান করি এবং আশা করি সমস্যা গুলো চলে যাবে। যখন সমস্যা গুলো আমাদের সহ্যের বাইরে চলে যায় তখন আমরা মুক্তির জন্য কল্পনার পথ খুঁজি। সমাধান অলীক কল্পনায় নয় বাস্তবে করতে হয়।
জীবনের কিছু ক্ষেত্রে আমরা সবাই কাউন্সেলিং থেকে উপকার পাই। অনেক সময় কোন কাউন্সেলর এর কাছে না গিয়েও আমরা তা পেয়ে থাকি পরিবারের কারোর কাছ থেকে বা কোন বন্ধুর কাছ থেকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কথা শোনার মত কেউ থাকে না বা এমন কিছু কথা থাকে যা আমরা কাউকে বলতেও চাই না , তখন হয়ত ভুলবশত আমরা কোন ভূল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এজন্য এক্ষেত্রে আমাদের একজন কাউন্সেলর এর সরণাপন্ন হওয়া বাঞ্চণীয়।
একজন কাউন্সেলরকে এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বা তাকে এমন হতে হয় সে তোমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শোনবে এবং তোমার যন্ত্রণাদায়ক কষ্টগুলোর উপর প্রলেপ দিয়ে হালকা করার চেষ্টা করবে। তার উপর নিজেকে বোঝা ভেবে দু:খিত হওয়ার কোন দরকার নেই। একজন কাউন্সেলর এর দায়িত্ব অনেক বেশি মনোযোগের এবং পক্ষপাত হীন দৃষ্টির যা একজন বন্ধুর নাও হতে পারে।
কাউন্সেলিং বিষয়টি কি ?
এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কোন ব্যক্তি তার ভিতরে চেপে রাখা কষ্ট,অনুভূতি,অভিজ্ঞতা, আচরণ যা কোন কষ্টের সাথে জড়িত সেগুলো অনায়াসে বলতে পারে। কাউন্সেলিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন নিরাপদ কোন পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে লোকজন উদ্বিগ্ন না হয়ে তাদের চিন্তা, ভয় ও কষ্টের কথা নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। একজন ব্যক্তির সাথে একজন কাউন্সেলর এর সম্পর্ক আইন-কেন্দ্রের উপদেশ দাতা বা নাগরিক উপদেশ কেন্দ্রের মত নয়। একজন কাউন্সেলর সরাসরি কোন উপদেশ না দিয়ে এমনভাবে সাহায্য করবে যাতে সাহায্যপ্রার্থী তার সমস্যার কারণ নিজেই খুজে পায় এবং সুন্দর জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার উৎস নিজেই খুঁজে পায়। রোগীদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম অর্থাৎ একজন রোগীকে এমনভাবে করতে হবে যেন সে তার ভিতরের রোগটিকে কোনভাবেই জীবনের জন্য বাধাস্বরূপ না ভাবে। তাকে এমন ভাবে বেঝাতে হবে যেন এটা হয়ে গেছে তো এখন রোগটাকে জীবনের অংশ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই পিছিয়ে পড়া যাবে না এবং এটাও সম্ভব।
কাউন্সেলিং কিভাবে সাহায্য করে?
সেই পথটি খুঁজে বের করে যেখানে আমরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। যা আমরা বলতে চাই তা যেন আরও পরিস্কার করে বলতে পারি এবং মুখ গোমরা না করে আমাদের কি প্রয়োজন তা জানতে সাহায্য করে কারণ অন্য কেউ আমাদের প্রয়োজন অনুধাবন করতে পারে না।
আমাদেরকে অসহায় অথবা হতাশ না হয়ে যা করা আমাদের জন্য ঠিক না তা বুঝতে সাহায্য করে। অসহায় না হয়ে আমিও পারি এটা বলতে সাহায্য করে।
সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন এক ঘন্টা করে করা যেতে পারে। সকল কাউন্সেলিং পুরোপুরি গোপনীয়।
থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং :
যে কোন রোগীর ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে তো অবশ্যই। থ্যালাসেমিয়া রোগেরও প্রকৃত পক্ষে স্থায়ী যে চিকিৎসা তা অনেক কষ্টকর ও ব্যয়সাপেক্ষ যা সবার পক্ষে করাও সম্ভব না। সেক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধই হচ্ছে এ রোগ থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায়। আর প্রতিকার করতে হলে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রচার বাড়াতে হবে এজন্য কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরী।
এর মাধ্যমে রোগীর পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সচেতন করা হলে এই সচেতনতা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাবে যা থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
একজন রোগীর জন্য কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরী। রোগীর সার্বিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ যথা: নিয়মিত রক্ত নিচ্ছে কিনা, আয়রনের পরীক্ষা করছে কিনা, আয়রন চিলেশনের জন্য ওষুধ ব্যবহার করছে কিনা, অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা গুলো ডা: এর পরামর্শ অনুযায়ী করছে কিনা, খাবার-দাবার এর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে কিনা, আরও অন্যান্য নিয়মাবলী মেনে চলে কিনা সে সব ব্যাপারে কাউন্সেলিং করতে হবে বা করা দরকার।
এছাড়াও রোগীর মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য এবং স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য ও প্রয়োজন। শারিরীক অসুস্থতার কারণে এরা মানসিক ভাবেও ভেঙ্গে পরে। সেক্ষেত্রে তাদের চিন্তা-ভাবনা ইতিবাচক পর্যায়ে নিতে সাহায্য করার জন্য ও কাউন্সেলিং প্রয়োজন। অর্থাৎ জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময় আমাদের সবাইকে কোন না কোন ভাবে কাউন্সেলিং এর সাহায্য নিতে হয়। কাজেই কাউন্সেলিং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
(এই তথ্যটি বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের সম্মানিত চিকিৎসকদের দ্বারা সম্পাদিত ও পরিমার্জিত)
অবন্তী রায়
নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড কাউন্সেলর
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতাল।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ডা সাবরিনা আরিফ চৌধুরী