অত্যাচার ছেলেদের উপরেও হয় !
স্বয়ং ছেলেরা এবং সমাজ তা স্বীকার করুক বা না করুক।সমস্যা হচ্ছে ওরা মেয়েদের মত ইমোশনাল হয়ে, কান্নাকাটি , হৈচৈ, নালিশ করে সবাইকে তা জানাতে পারে না। পৌরুষত্ব্যে আঘাত হানবে যে তাহলে। ‘নারী নির্যাতন’ যতটা সহজ ‘পুরুষ নির্যাতন’ ততটাই অ-সহজ,অবিশ্বাস্য এখনো। ছোটবেলা থেকেই আমাদের সমাজ আমাদের মাথায় এবং মনে কিছু অদ্ভুত ভাবনা চিন্তার বীজ বপন করে দেয় খুবই সূক্ষ্ম এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— ছেলে মানুষদের কখনো কাঁদতে নেই। কান্নার একচ্ছত্র মালিকানা যেন শুধুই মেয়েদের। অথচ মেডিকেল সাইন্সে লেখাপড়া করে জেনেছি Lacrimal glad ( ক্রন্দন গ্রন্থি) ছেলেদেরও আছে বৈকি ।
ধরা যাক ছোটবেলার কথাই। আমাদের দেশে অধিকাংশ ভাইদেরকে তার শৈশব কৈশোর কালে বোনের পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই হয়। বোন স্কুলে,কোচিং এ যাবে, গানের ক্লাস বা বন্ধুর বাসায় যাবে ভাইকে যেতে হবে তার সাথে সাথে।তা ভাই যদি বোনের থেকে ছোটও হয় তবুও আমাদের অত্যন্ত সুইট কিউট অভিভাবক মন্ডলী ভাবেন ঐ পিচকু ভাই খুব পারবে বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ! ফানি না ?
সেই শুরু।এরপর সারাজীবন ধরেই চলবে এসব। প্রেমিকার স্কুল ব্যাগ টানা থেকে পাশের বাসার আপুর জন্য রিক্সা ডেকে দেয়া থেকে বৌ’র দায়িত্ব বহন করা, সী বীচে, শপিং সেন্টারে যেয়ে বৌ’র ব্যাগ হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে নিজের ডেবিট ক্রেডিট কার্ডের ফালুদা বানানো তো নিত্য চলেই ।
মন দিয়ে লেখাপড়া করুক বা না করুক তাদেরকে ছোট থেকেই শোনানো হয় বড় হয়ে ফ্যামিলির দায়িত্ব নিতেই হবে। আমাদের সমাজে খুব কম মেয়েদের ক্ষেত্রেই একথা শুনতে হয়। আমরা বোনেরা লেখাপড়ায় সবাই ভালো ছিলাম।ছোটবেলা থেকে জানতাম লেখাপড়া করছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব, চাকরি করব। ব্যাস।ফ্যামিলিকে মেইনটেইন করতে হবে ভেবে আলাদা প্রেসার নিয়ে কখনো লেখাপড়া করিনি। আমার ক্লাসের সব থেকে পচা ছাত্রটিকেও এখন দেখি সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছে কোন না কোন পথে। পাড়ার বখাটে ছেলেটিও শুনেছি কোন না কোন একটা কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে সন্তানের বাবা হবার পর থেকে।
পৃথিবীর অধিকাংশ বাবা এখনো নিজের কথা না ভেবে সন্তানের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।আমরা সন্তানেরা ধরেই নিচ্ছি এটাই আমাদের প্রাপ্য।কিন্তু না। বাবা মানেই বটগাছ , ভরসা,নির্ভরতার একচ্ছত্র অধিপতি।এটা ঠিক।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীতে কিছু পচা বাবাও আছেন।যারা দায়িত্বহীন পলায়নপর।এমন পুরুষেরও অভাব নেই সমাজে।
আমরা জানি বা না জানি পৃথিবীতে এখনো এমন স্বামী আছেন যিনি দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধরে স্ত্রীর উশৃঙ্খল জীবন পদ্ধতি প্রবল ঘৃনা নিয়েও সহ্য করে যাচ্ছেন, ছাদ এক হলেও বিছানা আলাদা হয়ে সংসার নামক সার্কাসটা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র সন্তানের কথা ভেবে।
পৃথিবীতে এমন পুত্রও এখনো আছেন যিনি অসুস্থ মা’র মলমূত্র হাসপাতালে নিজ হাতে পরিষ্কার করেন।
আবার এমনও পুত্র আছে যিনি একা মায়ের সন্তান তিনি তার পরীক্ষার শীটে What’s your Father’s name ? এই প্রশ্নের উত্তর কখনোই লেখেন না। কোন ভাইবা বোর্ডেও বলেন না।এমনকি নিজের ব্যক্তিগত ডায়রিতেও বাবার নামের জায়গাটা হিজিবিজি হিজিবিজি কাটাকুটা করে রাখেন।
এই পৃথিবীতে এমন ভাই এখনো আছেন যিনি বোনকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন বলে ন’টা পাঁচ’টা অফিস শেষ করে উবার চালাচ্ছেন।
আমাদের এই পৃথিবীতেই এখনো এমন প্রেমিক আছেন যিনি চান তার প্রেমিকা শুধুই লেখাপড়া করুক, বড় বড় ডিগ্রিধারী হোক। প্রেম ঠিকমতো না করলেও বিশেষ অসুবিধা নেই 😋
ভালো থাকুক আমাদের বাবা,ভাই,স্বামী,পুত্র,বন্ধু,প্রেমিক পরিচয়ে জীবনে আসা এই মানুষগুলো যারা আমাদেরকে ভালো রাখতে যেয়ে নিজেকে ভালো রাখার কথা ভুলে থাকেন।
#মিম্ মি