শিশুর মস্তিস্ক বিকাশগত সমস্যা – অটিজম

অটিজম

 

শিশুর মস্তিস্ক বিকাশগত সমস্যা – অটিজম

 

অটিজম কি?

বর্তমান সময়ে অটিজম শব্দটি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত একটি শব্দ। অটিজম একপ্রকার জন্মগত ত্রুটি। মূলত এটি একটি মস্তিষ্ক বিকাশগত সমস্যা; কিন্তু একে মানসিক রোগ বলা যাবে না। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে মায়ের গর্ভে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বা পূর্ণতা লাভ বাধাগ্রস্ত হলে শিশুর অটিজম দেখা দেয়। সাধারণত অটিস্টিক শিশুর বুদ্ধিমত্তা সাধারণ শিশুর তুলনায় কিছুটা কম থাকে।

তবে কিছু কিছু অটিস্টিক শিশু গণিত, সঙ্গীত, ছবি আঁকা বা কম্পিউটারে পারদর্শী হয়। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের এ রকম পারদর্শিতা দেখা যায়।

কারণঃ

অটিজমের কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, অটিজমের ক্ষেত্রে জিনগত প্রভাব রয়েছে।

এছাড়া গর্ভকালীন মায়ের ভাইরাস জ্বর, বিশেষ করে রুবেলা ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের অভাব, শিশুর কোনো কারণে খিঁচুনি রোগ, প্রসবকালীন সমস্যা, খাদ্যনালিতে তথা পরিপাকে সমস্যা, খাদ্যে অ্যালার্জি, পরিবেশদূষণ, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ ইত্যাদিকে সার্বিকভাবে অটিজমের ক্ষেত্রে প্রভাবক বলা হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহঃ

অটিজম রোগটি শনাক্ত করা হয় মূলত শিশুর আচার-ব্যবহারের অস্বাভাবিকতা দেখে, মা-বাবার কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস জেনে ও মনস্তাত্ত্বিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। কোনো ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সাধারণত এ রোগ শনাক্তকরণে ভূমিকা রাখতে পারে না।

সাধারণত শিশুর ১৮ মাস থেকে তিন বছর বয়স থেকে মা-বাবা বুঝতে পারেন যে তাঁদের শিশুটি স্বাভাবিক নয়।

অটিজম আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়:

অটিজমে আক্রান্ত শিশু-কিশোররা সাধারণত ভঙ্গি বা কথায় তাদের মনের ভাব প্রকাশে ব্যর্থ হয়। অনেক শিশু চোখে চোখে তাকাতে চায় না।

স্বাভাবিক সামাজিক আচরণেও তারা অনেক পিছিয়ে থাকে। তাই সমবয়সীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন কিংবা অন্যের মনোভাব বুঝতে পারে না।

স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না।

চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে তার অসঙ্গত ধারণা থাকে।

কল্পনাযুক্ত খেলায় অটিস্টিক শিশুরা অত্যন্ত পিছিয়ে থাকে। যেকোনো একটি নির্দিষ্ট খেলনা বা জিনিসের প্রতি এই শিশুদের প্রবল আকর্ষণ থাকে এবং সেটি সবসময় সঙ্গে রাখে।

বারবার একই কাজ করতে থাকে।

অটিস্টিক শিশু-কিশোররা পঞ্চইন্দ্রিয় যথা— দেখা, শোনা, স্পর্শ, স্বাদ গন্ধ, চলাচলে কোনো না কোনোভাবে সংবেদনশীল থাকে। এ সংবেদনশীলতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে।

অটিস্টিক শিশুর খিঁচুনি হতে পারে।

এ ধরণের শিশুরা হঠাৎ শব্দ হলে চমকায় না আবার অনেক সময় স্বাভাবিক শব্দেই উত্তেজিত হয়।

১২ মাস বয়সেও কথা বলতে পারে না।

১২ মাস বয়সেও ইশারা করতে পারে না।

করণীয়ঃ

এ লক্ষণগুলো দেখা গেলে শিশুকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।

অটিজমের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। কারণ যত দ্রুত রোগটি নির্ণিত হবে ততই মঙ্গল।

এই ধরণের শিশুদের ক্ষেত্রে, বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, মা-বাবা ও আপনজনদের শ্রম ও যত্ন এবং এ রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহায়ক দলের একত্র কার্যক্রম ক্রমাগতভাবে চালিয়ে নিলে শিশুর বিকাশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হলেও একটি স্বাধীন জীবনযাপন করার মতো পর্যায় আনা সম্ভব হয়।

এক্ষেত্রে মা-বাবার বিশেষ যত্ন, বিশেষজ্ঞদের যথাযথ দিকনির্দেশনা, সঙ্গে সামাজিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুকে কিছু ওষুধ খেতে হয়, যেগুলো তার মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ, দিকনির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের ভূমিকা এ শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেই অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা না বললেই নয়।

এ ধরনের শিশুর অভিভাবকরা অনেকেই নিজেদের অসহায় মনে করেন। এমন না ভেবে শিশুর প্রতিভা কিংবা ভালো দিকগুলো বিকাশে সাহায্যে করুন। বাড়িতে শিশুর জন্য গঠনমূলক প্রোগ্রাম তৈরি করুন। শিশুর যোগাযোগ ও সামাজিক বিকাশে জোর দিন, তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন।

এ সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ সবকিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব শিশুর অনেক উন্নতি সম্ভব।

অটিজম

ডা. সাদিয়া ফাতেমা কবীর

 

Photo by Hugues de BUYER-MIMEURE on Unsplash

Related posts

Leave a Comment