মেনোপজ/রজোনিবৃতি/রজোবন্ধঃ ব্যাপারটা কি? হলে করনীয় কি?
আসুন আলাপ করি সবচেয়ে কম আলোচিত সমস্যা তথা মেনোপজ নিয়ে । কথা বলতে চেস্টা করছি মেডিকেলিও কঠিন কথা বাদ দিয়ে বুঝিয়ে বলতে ও আপনাদের ভয় দূর করতেঃ
ডাক্তারি সংজ্ঞা অনুযায়ী ,
‘অবিরত ১২ মাস বা তারো বেশি সময়ের জন্যে সাময়িক বা সম্পূর্ণরূপে মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ থাকাকেই মেনোপজ বলে ‘। সাময়িক ভাবে বন্ধ প্রেগন্যান্সির কারণেও থাকে, কাজেই বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা আসলে অত ভয়াবহ কিছুই না।
হওয়ার বয়সঃ
সাধারনত ৪৫ বছর থেকে ৫৫ বছর। কিন্তু ৪০ বছরেও হতে পারে আবার ৬০ বছর বয়সেও হতে পারে
হওয়ার কারণঃ
যখন ওভারি বা ডিম্বাশয় ডিম্বানু তৈরী করা বন্ধ করে দেয় এবং ঋতুচক্র হয় না ।
ক) স্বাভাবিকঃ
জড়ার কারণে যখন ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন হরমোন নি:সরন বন্ধ হয়ে যায়
খ) অকালিকঃ
১। বংশগত
২। যেসব অসুখের কারণে ওভারিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্তহয়ে ও স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না, যেমন পলিসিস্টিক ওভারি
৩। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড গ্লান্ডের কোন ডিজিজ
গ) অস্ত্রোপচারঃ
যখন অস্ত্রোপচারের সাহায্যে ওভারি শরীর থেকে সরিয়ে ফেলতে জীবন রক্ষার্থে , যেমন ওভারিয়ান ক্যান্সার ।
লক্ষণ সমূহঃ
(এটা কোন রোগ নয়, জৈবিক পরিবর্তন মাত্র। শরীরবৃত্তীয় ও মনোবৃত্তীয় কারণে ভাগ করে লিখছি বুঝিয়ে বলার জন্যে , একদম ভয় পাবেন না )
শারিরবৃত্তীয়ঃ
ক) হট ফ্ল্যাশ
- দিনে প্রায় ২০ বার পর্যন্ত হতে পারে প্রচন্ড গরম লাগার এই অনুভূতি, যা প্রায় ৭৫% থেকে ৮৫% নারীদের হয়ে থাকে।
- কয়েক সেকেন্ড থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে
- মেনোপজ শুরু কিছু দিন আগে থেকে মেনোপজ হয়ে যাবার প্রায় বছর দুয়েক পর্যন্ত থাকবে
খ ) রাতে ঘাম হওয়া
গ) মাথা ব্যাথা
ঘ) বুক ধরপর করা ( palpitation )
ঙ ) হাড় ও জোড়ে ব্যাথা
ঘ ) ভ্যাজাইনা শুকনো হয়ে যাওয়া, চুল্কানি , প্রস্রাব ধরে রাখতে কস্ট হওয়া ইত্যাদি
মনোবৃত্তীয়ঃ
ক) মনোযোগের অভাব ও ভুলোমনা হয়ে যাওয়া
খ ) শারিরীক সম্পর্কে আগ্রহ কমে যাওয়া (শেষ হয়ে যাওয়া বলিনি কিন্তু )
গ ) মূড সুইং করা
ঘ ) ঘুম কমে যাওয়া
ঙ ) ডিপ্রেশন ইত্যাদি
চিকিৎসাঃ
ক) হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (কোন ঔষধের নাম জানতে চাইবেন না প্লিজ, মুখোমুখি ডাক্তারের সাথে কথা বললে তিনি উপযুক্ত ঔষধ দেবেন )
খ ) ভাইটামিনস (দিনে কতখানি খাবেন, কতদিন খাবেন একেকজন রোগীর ক্ষেত্রে একে রকম হয়),ক্যালসিয়াম ভাইটামিন বি ইত্যাদি
গ ) খাবারে পরিবর্তন (আজকাল সচেতন মানুস অনেক আগে থেকি এগুলো করেন, কাজেই মন খারাপের কিছু নেই, কেমন ?)
- কম ফ্যাট যুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- কাটাযুক্ত মাছ
- সবুজ সবজি
ঘ) ব্যায়াম (এটাও আজকাল সবাই করে থাকেন, তাই না ? )
নিয়মিত হাটা, ভাল লাগলে নাচতে পারেন, যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা
একটূ খেয়াল করলে দেখবেন এর সমস্ত লক্ষণ কখনো আপনার মা, শাশুড়ি , নানি , দাদির হয়েছিল বা হয় । এগুলো উনি ইচ্ছে করে করেন না, জরা জনিত অসুস্থার কারণে করেন এটা ভেবে নিয়ে একটু সহ্য করবেন প্লিজ ।
উপরের মোটামুটি সমস্ত লক্ষণ গূলো শুধু নারীদেরই বয়স বাড়লে হয় তা নয়, পুরুষদেরও কিন্তু হয় । কাজেই নারীদের ‘কেন মেয়ে হলাম ভাবার কারণ নেই’, আর পুরুষদেরও খুব খুশি হবার কিছু নেই । ইনফ্যাক্ট ‘এন্ড্রোপজ’ নিয়ে বেশ চিন্তা ভাবনাও চলছে কিন্তু !
‘আমার রাত জাগা তারা’ গানটার এক জায়গায় বলে ‘ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে আমার নাম ধরে কেউ ডাকে’, এর সোজা মানে করলে দাঁড়ায় প্রতি সন্ধ্যাবেলায় গীতিকার ভদ্রলোকের অডিটরি হ্যালুসিনেশন হয় যে তাকে কেউ ডাকছে; এই ভয়াবহ ব্যাপারটা নিয়ে এমন সুন্দর গান রচনা করা গেলে ‘মেনোপজ’ কোন দুশ্চিন্তার ব্যাপারই না কিন্তু ।
শুধু নারী বা পুরুষ নয়, সকল জীব এমনকি গাছেরাও বুড়ো হয় আর বুড়ো হওয়ার লক্ষণ সবার দেহেই আসে । এভাবেই সৃষ্টিকর্তা আমাদের বানিয়েছেন, তাই বলে কি কেউ মরার আগেই মরে যায় ?
হাসুন, হেলদি লাইফস্টাইল মেইন্টেইন করুন আর ভালো থাকুন ।
ধন্যবাদ
লিখেছেনঃ ডা সংগীতা হালদার রায়
ছবি কৃতজ্ঞতা :গীতা হালদার, নিয়তি রায়