মাসিক বা স্বপ্নদোষ
মাসিক বা স্বপ্নদোষ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ পৃথিবীর সমস্ত ছেলে মেয়ের জন্য একটা ফিজিওলজিক্যাল ব্যাপার। প্যাথলজিক্যাল ব্যাপার কিন্তু নয় মোটেই। মেডিকেলের ভাষায় ফিজিওলজিক্যাল মানে হচ্ছে মানব শরীরের স্বাভাবিক কোন বিষয় আর প্যাথলজিক্যাল মানে হচ্ছে শরীরের অসুস্থ অবস্থা।
কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে নারী পুরুষের খুব স্বাভাবিক এই শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনকে আমাদের দেশে কেন যেন সহজ ভাবে গ্রহণ করা হয় না। বরং পিরিয়ড কে নিয়ে “ইস্যু” তৈরি করা হয়। স্বপ্নদোষকে বানানো হয় রাস্তা ঘাটে ক্যানভাসারদের বানিজ্যের পসরার রসদ।
স্কুল কলেজে পাঠ্যপুস্তকে এই টপিক থাকলেও কেন যেন সেসব চ্যাপ্টার পড়ানো হতো না।আমার যতটুকু মনে পড়ছে আমাদের সময় ক্লাস সিক্সের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইয়ে চ্যাপ্টার সিক্সে মাসিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছিল।অথচ স্কুলে ঐ চ্যাপ্টারটা বাদ দেয়া হয়েছিল সিলেবাস থেকে।কিন্তু তাতে কি আসলেই বাদ দিয়েছিলাম নাকি আমরা ? আমি তো অন্ততঃ বাদ দিতে পারিনি।অতি আগ্রহ নিয়ে ঐ চ্যাপ্টার আমি পড়েছিলাম।যেহেতু তখনো আমার শরীরে খুব স্বাভাবিক ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন টা ঘটেনি।তাই বিরাট কৌতূহলী অনুভব করেছিলাম পড়তে পড়তে। সেই আমার প্রথম জানা ‘মাসিক’ বলে বাংলাতে একটা শব্দ আছে যা মাসিক পত্রিকাকে বোঝাচ্ছে না।ছোটবেলায় আমি একটু আঁতেল টাইপ ছিলাম। তখন আমার একটা ডায়রি ছিল vocabulary শেখার।যখন যেখানে বাংলা ইংরেজি নতুন যে শব্দ পেতাম টুকে নিতাম। আজও মনে আছে ফ্রক পরা গোল্লা গাল্লু এই বাচ্চা আমি আমার ডায়রিতে লিখে রেখেছিলাম ‘ম’ দিয়ে নতুন বাংলা শব্দ হিসেবে ‘মাসিক’ 😉।
স্বপ্নদোষ শব্দটা জেনেছিলাম কলেজে উঠে। তখন এক পন্ডিত বান্ধবী আর আমি মিলে বাক্য সংকোচন পর্যন্ত করে ফেলেছিলাম শব্দটার—– যে স্বপে দোষ থাকে তাকে বলে স্বপ্নদোষ 😋।
বুঝতেই পারছেন কতখানি আতলামী স্বভাবে থাকলে এসব মাথা থেকে বের হয় 😉
যাহোক সব থেকে দুঃখজনক হচ্ছে এসব নিয়ে অধিকাংশ পরিবারে পারিবারিকভাবে শিক্ষা দিতেও আগ্রহ দেখা যায় না।
মেয়েদের মাসিকের বিষয়টা তাও কোন না কোন ভাবে সব সময়ই আলোচনায় আসে। মেয়েরা পরিবারের কাছ থেকে মাসিক কি করে ম্যানেজ করতে হয় তা জানতে পারে।কেন হয়?প্যাড নিয়ে বানিজ্যিক কারনে প্রচারণা প্রসারনার ফলেও কম বেশী অনেক তথ্য সামনে আসছে।
কিন্তু বেচারা ছেলেরা বেশীর ভাগ সময় এ সম্পর্কে পরিবার থেকে কোন সহযোগিতা পায় না। কেউ তাদের এ বিষয়গুলো সুন্দর করে আদর করে কাছে বসিয়ে বুঝিয়ে বলে না। হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে ছেলেটি যখন আবিষ্কার করে তার ট্রাউজার ভেজা নিশ্চিত ভাবে অস্বস্তি তার হয়।
নীচে খুব সহজভাবে ‘স্বপ্নদোষ’ এবং ‘মাসিক’ কি তা নিয়ে বলার চেষ্টা করলাম —–‘
স্বপ্নদোষ কি?
__________________
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের হঠাৎ করেই বীর্যপাত শুরু হয় এবং তা প্রাপ্তবয়ষ পর্যন্ত কম বেশী হতে থাকে। । সাধারণত এটা ঘুমের ভেতর নানা উত্তেজক স্বপ্ন দেখে হয় বলে একে স্বপ্নদোষ বলে ।যদিও এটা দোষের কোন কিছু নয়। স্বপ্ন দোষ যে সবসময় যৌনতার কথা ভেবে হয় তা নয়। যুদ্ধ, পরীক্ষা, মারামারি কিংবা যে কোন উত্তেজক স্বপ্ন দেখেই হতে পারে। বীর্যথলিতে বীর্যরস অতিরিক্ত জমে গেলেই তা বেরিয়ে আসে। গ্লাসে পানি বেশী জমা হলে তা যেমন উপচে পরে তেমন। তবে অনেক সময় দুএকজনের স্বপ্নদোষ বয়ঃসন্ধি কালে হয় না তাতে ভয়ের কিছু নেই প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সাধারণত হয়ে যায়।বীর্যপাত কিন্তু শুধু স্বপ্নেই হয় না সেক্স করার সময় অথবা হস্তমৈথুন করার সময় ও হয় ।এ কাথাটি স্বপ্নদোষ হলে বাচ্চাদের জানাতে হবে।আর জানাতে হবে অভিনন্দন কারন সে বাবা হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতে যে বীর্য রস আসে তাতে তরল পদার্থ থাকে 90 ভাগ আর শুক্রাণু থাকে পাঁচ ভাগ।এ পাঁচ ভাগে কোটি কোটি শুক্রানু(পুরুষের ডিম) থাকে।শুক্রাণুগুলো লেজ যুক্ত এবং এরা চলতে পারে। শুক্রানু X বা Y ক্রোমোজোম বহন করে। কিন্তু মেয়েদের ডিম্বাণু শুধু X ক্রোমোজোম বহন করে। তাই ছেলে বা মেয়ে হওয়ার জন্য শুধুমাত্র বাবার ভূমিকা থাকে। মায়ের নয়।
মাসিক কি?
__________________
মাসিক বা পিরিয়ড একটা normal physiological condition যাকে medical term menstruation বলে। জরায়ুর (uterus) দুই পাশে থাকে fellopian tube বা ডিম্বনালী, ডিম্বনালীর শেষ অংশে থাকে ovary বা ডিম্বাশয়। ইউটেরাসের নীচের অংশ হচ্ছে cervix, cervix এর নীচের অংশ হচ্ছে ভ্যাজাইনা (vagina)। বয়ঃসন্ধিকালে (adolescent period) ওভারী হরমোন (oesteogen, projesteron) তৈরী করতে শুরু করে। ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন নিঃসরণ female charactersistics এর জন্য দায়ী এবং নিয়ন্ত্রণ করে। ফলিকল পরিপক্ক (matured) হলে egg বা ovum বের হয়ে আসে, এটাকে Ovulation বলে। মাসে একটাই ওভাম তৈরী হয়, যদি sperm এসে একে নিষিক্তকরণ (fertilisation) করে তখন Zygote তৈরী হয়। এই fertilisation হয় ফেলোপিয়ান টিউবে। এরপর সেই নিষিক্তকৃত জাইগোট চলে আসে ইউটেরাসে। ইউটেরাসে এসে এটা স্থায়ী (implantation) হয়। এই implanted zygote থেকেই পরবর্তীতে fetus বা মানব ভ্রুণ হয়, ভ্রুণ থেকে হয় পরিপূর্ণ মানবসন্তান। যদি কোন কারণে sperm ovum কে fertilise করতে না পারে তাহলে এই ওভাম নষ্ট হয়ে পিরিয়ডের সাথে বের হয়ে যায়। fertilisation না হলে ওভুলেশনের ১৫ দিনের মধ্যেই পিরিয়ড হয়ে যায়। পিরিয়ড বা menstruation হচ্ছে vaginal bleeding যেখানে blood এর সাথে ইউটেরাসের বিভিন্ন layers এর শেডিং ও যায়, পিরিয়ড থাকে ৬ – ৭ দিন। implantation হয়ে গেলে তখন পিরিয়ড বন্ধ থাকে। পিরিয়ড রেগুলার হওয়া মানে হরমোন ঠিকভাবে নিঃসরণ হচ্ছে, আমাদের শরীরের hormonal balance ঠিক আছে।
(স্বপ্নদোষ এবং মাসিক কি ? এটুকু আমার ভীষন পছন্দের সিনিয়র দুই আপু ডা. Najmun Nahar Dina ডা.Nahid Sultana এর লেখা থেকে নিলাম)
সুতরাং লজ্জা বা ভয় নয়, সঠিক তথ্য জানতে হবে জীবনের খুব স্বাভাবিক দুটো ফেজ মাসিক আর স্বপ্নদোষ নিয়ে। আমার মতো বাংলা ব্যাকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করে নয় 😋😉
#মিম্ মি