একজন মেয়ে শিশুর  কান্না

মেয়ে শিশুর 

একজন মেয়ে শিশুর  কান্না

চার বছর বয়স থেকে বাবা বলে জেনে আসা, ডেকে আসা, চিনে আসা লোকটি যখন চৌদ্দ বছরে বয়সে পৌঁছানো সৎ কন্যার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেন তখন কি উচিত না এই পৃথিবীটার ধ্বংস হয়ে যাওয়া ?


বাবা তো বাবা ই ! তাই না ?
সৎ বাবা বা সৎ মা— সম্পর্কে ছোটবেলা তে গল্পের বই পড়ে জেনেছিলাম তারা খুব অত্যাচারী হয়। খাওয়া পরা এসবের কষ্ট দেয়। কিন্তু বাবা বলে চার বছর বয়স থেকে ডেকে আসা, যার কোলে পিঠে চড়ে পৃথিবী দেখতে শেখা, স্কুলে বায়োলজিক্যাল ফাদারের নাম না বরং লালন পালন করছেন যে তার নাম মেনশন করা কন্যাকে যখন বাবা নামক মানুষরূপী পশু কর্তৃক দিনের পর দিন abused হতে হয় নিজ ঘরে তখন নিজেদেরকে আর মানুষ মনে হয় না। পশু পশু লাগে ।

খুব কাছের পরিচিত জনেরা অনেকেই আমাকে বলেন– কেন এত বছর ধরে একা আছি? নতুন করে কেন জীবনটা আর কারো সাথে শুরু করছি না ?
এমন না যে কেউ কখনো সম্মান আর ভালোবাসা জানিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়নি। কিন্তু আমি ই পারিনি। বিশ্বাস ভঙের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাইনি আমি। যদিও আমি দারুন ভাবে অতীত ছুঁড়ে ফেলে নিজের মতো করে সাজিয়েছে বর্তমানকে। আসলে এটাও সত্য সন্তানের কথা ভেবেই কেন যেন মনে হয়েছে এই মুহুর্তে একটাই ডিউটি সন্তানকে লালন পালন করা, ক্যারিয়ার করা। তারপর হয়তো সুযোগ হলে সমুদ্রের তীরে কারো পাশে বসে সারারাত জ্যোস্না স্নানের প্ল্যান করা
যাবে। কিন্তু এখন না। কেন যেন মনে হয় মোটামুটি অল্প বয়সে জীবন সংক্রান্ত ভীষন বিচক্ষণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম। যদিও বহু পেইন খাবার পরেই তা পেরেছি।

ভাগ্যিস আমার কন্যা সন্তান নেই !
যদিও এই অসুস্থ দেশে অসুস্থ সমাজে ছেলে মেয়ে কোন শিশুই কি আর নিরাপদ ? এমনকি নিজের ঘরেও আমাদের শিশু সন্তান নিরাপদ নয়। পৃথিবীতে যত child abuse ঘটে তার অধিকাংশই খুব কাছের নিকট আত্মীয়, পরিচিতজনদের দ্বারাই ঘটে।

যে মেয়েটির কথা লিখেছি সে একজন ডাক্তার মায়ের সন্তান। মায়ের সাথে নতুন পরিবারে আরো দু ভাইবোন এবং বাবা নামক লোকটার সাথে তার বসবাস ছিল।

মায়ের অবস্থাটা ভাবুন একবার। কতখানি অপরাধবোধের সে কুঁকড়ে আছে। এর থেকে তো সারাজীবন সন্তানকে নিয়ে একা থাকলেই হয়তো ভালো হতো– এটাই কি ভাবছে না মা টা ? অথচ নতুন করে জীবন শুরু করার অধিকার তারও আছে কিন্তু।
নিরাপত্তার কারনে সন্তানকে আজ নিজের কাছ থেকে বহুদূরে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছেন এই মা।

এদিকে বর্তমান সংসারে আপুর আরো দুটো সন্তান রয়েছে। তাদের কারনেই আজ আপু পারছেন না এই নর পিচাশের কাছ থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে। এরাও তো তার সন্তান। কি ভয়াবহ পরিস্হিতি।
দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আপু । একই ছাদের নিচে ভিন্ন ঘরে থেকে সহ্য করে যাচ্ছেন জানোয়ারটাকে।

কিন্তু, এভাবে কয়দিন?

জানি সবাই বলবেন আইনের দ্বারস্থ হতে। কিন্তু এখানেও অনেক সমস্যা আছে। আমাদের দেশে আইনের প্রয়োগ কেমন হয় সবাই জানি কম বেশি।
অর্থ এবং ক্ষমতা সম্পন্ন নরপিশাচের পক্ষের উকিল তো ছেড়ে দিবে না আপুর কন্যাকে।ভয়াবহ নোংরা সব প্রশ্ন করে তাকে হাজার বার রেপে করার মতো ক্ষত-বিক্ষত করবে। কিন্তু কেনো? কোর্ট নিশ্চয়ই প্রমান চাইব। Child abuse কিভাবে প্রমাণ করা সম্ভব!!!!!
পৃথিবীর কোনো MOLESTER কি কাউকে সামনে রেখে তারপর শিশুর শরীরে তার হাত বুলায় ?

জানি ফেসবুকে লিখে কিছুই হয় না। তবুও একজন অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ, একজন সচেতন নাগরিক, একজন চিকিৎসক এবং সর্বোপরি একজন সিঙ্গেল মা হিসেবে আমি পারিনি আপুর একের পর এক কান্নামাখে ফেসবুক পোস্টগুলো দেখে চুপ করে থাকতে।
কিছুই কি করার নেই আমাদের ?

আপুর বাচ্চার প্রতি এক সমুদ্র ভালোবাসা আর আপুর প্রতি সত্য প্রকাশের সাহসের জন্য সম্মান আর শ্রদ্ধা নিয়ে লেখাটি লেখার চেষ্টা করেছি। বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে লিখতে যেয়ে।

মামনি, আমাদেরকে ক্ষমা করে দিও। আমরা সিঙ্গেল মায়েরা যে কতখানি অসহায় সন্তান ইস্যুতে। পৃথিবীর কেউ তা বুঝবে না। তোমার মা তোমাকে সর্বোচ্চ সুন্দর জীবন দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তুমি যখন আর একটু বড় হবে তখন তা বুঝতে পারবে। আর জীবনে চলার পথে নোংরা ময়লা পায়ে লাগলে তা দুমড়ে মুচড়ে সামনে শুধুই এগিয়ে যেতে হয় মা। নোংরা লাগলে আমরা পা কেটে ফেলি না, ধুঁয়ে ফেলি। তুমিও এসব নোংরা নিয়ে একদম ভাববে না। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই দুষ্টু আর নোংরা লোকেদেরকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।
আর পৃথিবীর সব বাবা , হোক না নন বায়োলজিক্যাল ফাদার পচা লোক হয় না। কেউ কেউ হয়। বাবা তো বাবা হয়—— মাথার উপর বটগাছ। কিছু ব্যাড লাক ফাদার থাকে যারা আসলে বাবা কখনোই হতে পারে না। তা হোক বায়োলজিক্যাল অথবা নন বায়োলজিক্যাল।
আর সব শেষে একটা কথা বলি গো রাজকন্যা—- তুমি কিন্ত আবার ভাববা না ছেলে মানুষ মানেই নোংরা, পচা,খারাপ। একদম না। তুমি ই নিজেই দেখতে পাবে কত ভালো বন্ধু, ভাই পাবে জীবনে। আরো একটু বড় হলে ভীষন চমৎকার একজন bfও হয়তো হবে তোমার😋। তারপর একদিন লাল টুকটুকে বৌ হবে তুমি একজন ভদ্র ছেলের। একদিন আমার মতো ভীষন লক্ষী একটা ছেলে বাবুর মাও হয়তো হয়ে যাবে তুমি😉। ভালো থেকো মা। অনেক বড় মানুষ হও। মা কে ভালোবেস সব সময়।

 মেয়ে শিশুর 

# মিম্ মি

Photo by Jens Johnsson on Unsplash

Related posts

One Thought to “একজন মেয়ে শিশুর  কান্না”

  1. zafrina islam

    আমি “মা” হয়ে সব কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমার FB তে কতোশত শিক্ষিত মানুষ, রাজনীতিবিদ রয়েছেন। আপনাদের মধ্যে কেউ একজনও কি নেই “এই মায়ের কথাগুলো তাঁর কান পর্যন্ত পৌছে দিতে পারেন একজন সচেতন বিবেকবান মানুষ হিসাবে?”

Leave a Comment